নিজস্ব প্রতিনিধি, শালবনী: মুখ্যমন্ত্রীর ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ কর্মসূচির প্রশংসা বিজেপি নেতার মুখে। শালবনী ব্লকের লালগেড়িয়ার এই ঘটনা সামনে আসতেই দানা বাধতে শুরু করেছে রাজনৈতিক বিতর্ক। শালবনী ব্লকের বিজেপি নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য উমাকান্ত মাহাতর মন্তব্য যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলেছে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বকে। এদিন উমাকান্ত ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এই শিবিরের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন।
তৃণমূলের নেতারা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচি শুরু হতেই উপচে পড়েছে মানুষের ভিড়। এই কর্মসূচি নিয়ে কম সমালোচনা করেনি বিজেপি নেতারা। এখন তাঁদের মুখেই এই প্রকল্পের প্রশংসা শুনে ভালো লাগছে। বিজেপি নেতাদের কথায়, সরকারি কর্মসূচিতে যাওয়ার অধিকার সকলেরই আছে। দলের তরফে এনিয়ে নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে অঘোষিত ভাবে কর্মসূচিতে গিয়ে ভাষণ দেওয়াকে দল সমর্থন করে না। এতে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। সকল নেতাকেই বুদ্ধি করে পদক্ষেপ করতে হবে।
জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে লালগেড়িয়া এলাকার এই কর্মসূচিতে গিয়ে বিজেপি নেতা উমাকান্ত বলেন, দেখতে হবে এই এলাকায় পাড়ায় সমাধান প্রকল্প যদি সাধারণ মানুষের কাছে তুলে আনতে পারা যায়। আমাদের সম্মানীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাড়ায় সমাধানে কিছু স্কিম বলেছেন। তিনি বলেছেন, পাড়ায় যদি কোনও সমস্যা থাকে সেগুলোকে তুলে ধরতে। এই স্কিমগুলোকে যদি বাস্তবায়িত করা যায়, তবে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। আপনারা আপনাদের সমস্যার কথা বলুন।
রাজ্য তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ সিংহ বলেন, দেরিতে হলেও বিজেপি নেতারাও এই প্রকল্পের উপকারিতা বুঝতে পারছেন। ওই বিজেপি নেতা রাজ্যের প্রকল্পের প্রশংসা করেছে বলে জানতে পেরেছি। বিজেপি নেতা হলেও উনি সত্যি কথাটাই বলেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সাল থেকে গোটা জঙ্গলমহল জুড়ে বিজেপির উত্থান শুরু হয়। বিজেপির সংগঠন দ্রুত বাড়তে শুরু করে। লালগেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতও যায় বিজেপির দখলে। গত পঞ্চায়েত ভোটেও জেতে বিজেপি। অল্প মার্জিনে হেরে যায় তৃণমূল। জানা গিয়েছে, এই পঞ্চায়েতের কাজ নিয়ে এলাকার মানুষের ক্ষোভও রয়েছে। সেই ক্ষোভ কমাতেই এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় চারটি ফেজে আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান কর্মসূচি হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন বিজেপির নেতারা।
এক বিজেপি নেতার কথায়, গত কয়েক বছর ধরে একের পর এক নির্বাচনে হেরেছে বিজেপি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন থেকেই হারের যাত্রা শুরু হয়। সামনেই বিধানসভা নির্বাচন আসছে। দল প্রস্তুতি নিলেও, নেতাদের কার্যকলাপে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সরকারি নিয়ম অনুসারে কর্মসূচি হোক, কিন্তু সেই শিবিরে দাড়িয়েই তীব্র প্রতিবাদ জানানো উচিত ছিল। কারণ সেই শিবিরে প্রশাসনের আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন।
মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, নিচুতলার বিজেপি কর্মীরা বুঝেছেন, এই প্রকল্পের কতটা উপকারিতা রয়েছে। তাই বিজেপি নেতারা মানুষকে এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে আহ্বান করছেন। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনমুখী প্রকল্পের সুবিধা তো বিজেপি নেতাদের পরিবারের সদস্যরাও পাচ্ছেন।-নিজস্ব চিত্র