• আদালতের পরিকাঠামো ঘাটতিতে হাইকোর্টে মুখ্যসচিবকে তিরস্কার
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • রাজ্যের আদালতগুলির দুর্বল পরিকাঠামো নিয়ে ফের সরব হল কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল শুনানিতে হাজির ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব। সেখানেই জেলা আদালত থেকে শুরু করে হাইকোর্টের অব্যবস্থা ও তহবিল বরাদ্দে গড়িমসির জন্য কার্যত তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল রাজ্য প্রশাসনকে।

    বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট প্রশ্ন তোলে— ‘সিসিটিভি বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। দরকার ছিল ১৭.৪১ কোটি টাকা। অথচ এতদিনেও ফান্ড ছাড়া হল না কেন?’ মুখ্যসচিবের উত্তরে তিনি জানান, ১০ কোটি টাকা বৃহস্পতিবারই ছাড়া হচ্ছে, বাকিটা পরে দেওয়া হবে। কিন্তু সেই জবাবে আদালতের তির্যক মন্তব্য— ‘গত ডিসেম্বরে নির্দেশ গিয়েছে, এখনও বাস্তবায়ন হল না কেন?’

    এরপর একের পর এক প্রশ্নবাণ ছুড়ে দিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিরা বলেন, ‘শেষ কবে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেছিলেন?’, ‘জানেন কি, হাইকোর্টে কার্টিজ নেই?’, ‘পেপারলেস কোর্ট চলছে জানেন?’ আরও কড়া ভাষায় আদালতের মন্তব্য, ‘আইন বলছে আদালতের খরচ রাজ্যকেই বহন করতে হবে। কিন্তু এ রাজ্যে কী চলছে?’

    শুধু তাই নয়, জেলা আদালত থেকে হাইকোর্ট, সর্বত্র পরিকাঠামো উন্নয়ন থমকে থাকার বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত। বিচারপতির সোজাসাপটা মন্তব্য, ‘এটা ১০ বা ১৭ কোটির প্রশ্ন নয়। বিষয়টা গুরুতর হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না।’

    আইনজীবীদের অভিযোগ, ৫৫টি প্রকল্প আটকে রয়েছে, যার মধ্যে আদালত ভবনের কাজও আছে। বহু আগেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও কিছু হয়নি। সেই প্রসঙ্গ টেনে বিচারপতির রসিকতা, ‘এই অবস্থায় কেউ অসুস্থ হবেন না দয়া করে, হেলথ সেন্টার তো নেই!’

    আদালতের নির্দেশ, অবিলম্বে হাইকোর্টের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী অফিসারদের চিহ্নিত করতে হবে। পুরনো ফাইল ফিরিয়ে আনতে হবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যেই। পাশাপাশি নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টের যাবতীয় চাহিদার তালিকা জুডিশিয়াল সেক্রেটারির কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে।

    সবশেষে আদালত চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়ে জানিয়ে দেয়, আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টের মধ্যে মুখ্যসচিবকে ফের আদালতে হাজির হয়ে ফান্ড বরাদ্দ, প্রকল্পের অগ্রগতি এবং বাস্তবায়নের পূর্ণাঙ্গ তথ্য-সহ রিপোর্ট দিতে হবে। বিচারপতির স্পষ্ট নির্দেশ, ‘বাকি নয়, কাজ চাই। আদালতের প্রাপ্য যেন আদালত পায়।’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)