• যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর রহস্যমৃত্যু! রাতদুপুরে চাঞ্চল্য ছড়াল ক্যাম্পাসে
    প্রতিদিন | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • রমেন দাস: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর রহস্যমৃত্যু। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যেই অচেতন অবস্থায় উদ্ধার ইংরেজি বিভাগের স্নাতক স্তরের ছাত্রী! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) চার নম্বর গেটের কাছের পুকুরপাড়ে অচৈতন্য অবস্থায় ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয় বলে খবর। এরপর যাদবপুরের এক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে ওই ছাত্রীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার রাতের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই ওই বেসরকারি হাসপাতালে পৌঁছেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, প্রশাসকরা।

    সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটের কাছে একটি শৌচালয় রয়েছে। ঠিক তার পাশের পুকুর, কেউ কেউ ঝিল বলেন, ঠিক ওই স্থান থেকেই উদ্ধার হয় ‘অচেতন’ পড়ুয়ার দেহ। তবে পুকুরে ডুবে তাঁর মৃত্যু নাকি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে, এবিষয়ে স্পষ্ট কোনও তথ্য মেলেনি এখনও। ময়নাতদন্তের পরে বিস্তারিত জানা যাবে বলে খবর।

    শোনা যাচ্ছে, এদিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান চলছিল। ‘ড্রামা ক্লাবে’র তরফে ছিল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ। বেশ রাত পর্যন্ত ক্যাম্পাসের মধ্যে এই অনুষ্ঠান চলে বলে দাবি! এই আবহেই বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে ১০টা ৩০ মিনিটের মধ্যে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয় বলে খবর। ইংরেজি বিভাগের ছাত্রীর রহস্যমৃত্যু (Student Death) ফের বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দিকে আঙুল উঠেছে ফের।

    এ বিষয়ে জানতে ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালে’র তরফে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একাধিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ্ স্টুডেন্টস বাপ্পা মল্লিক জানিয়েছেন, ‘খবরটি শোনা মাত্রই নিজে গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে এসেছি। শুনেছি এমন ঘটেছে। হাসপাতালে আছি এই মুহূর্তে। আর একটু বিস্তারিত জেনে বাকিটা জানাতে পারব।’ প্রায় একই জবাব যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ্ আর্টস সুদীপ সুন্দর দাসের। তাঁর কথায়, ‘আমিও হাসপাতালে। আমরা সকলে এই ঘটনার খবর পেয়ে এখানে এসেছি। ওর খবরে অনেক ছাত্রছাত্রী অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের রেজিস্ট্রার রয়েছেন হাসপাতালে। যদি কিছু বলতে হয় উনি জানাবেন।’ যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা হলেও বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।

    ছাত্রীমৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন। উঠে এসেছে ২০২৩ সালের প্রসঙ্গ। নদিয়ার বাসিন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের নবাগত ছাত্রের মৃত্যুর কথা তুলে ধরেছেন অনেকেই। ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ইউনিটের তরফে কিশলয় রায়, তীর্থরাজ বর্ধনরা ঘটনার ‘পূর্ণাঙ্গ তদন্ত’ চেয়েছেন। এদিন বিবৃতি প্রকাশ করে, এত রাত পর্যন্ত ক্যাম্পাসের মধ্যেই অনুষ্ঠানের অনুমতি কেন? এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য সমাজমাধ্যমে নিজের বক্তব্য পোস্ট করেছেন। তাঁর দাবি, ‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে এক ছাত্রীর মৃত্যুর খবরে আমি শোকস্তব্ধ। ঘটনাটি ঘটেছে ৪ নং গেটের কাছে এসএফআই ইউনিউন রুমের পাশে। এটি অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক। এইগুলো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। যারা সিসিটিভি লাগানো ও পুলিশ পোস্টিং-এর বিরুদ্ধে, তারা এর দায়ভার এড়াতে পারে না।’ প্রায় একই সুরে সরব হয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) নেতা সুদীপ রাহা। তিনি লিখেছেন, ‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসিটিভির প্রয়োজনীয়তা কতটা, তা আবার প্রমাণ হয়ে গেল। সেদিন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলাম, এই খারাপ দিনগুলোকে না দেখার জন্যেই। অনেক হুমকি-ধমক-ঈর্ষা-কুকথার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে লড়াই হয়েছিল। আদালতের নির্দেশ ছিল সিসিটিভির পক্ষে। কার্যক্ষেত্রে কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, তাও প্রকাশ্যে আসবে।’ একের পর এক তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতার মতোই সরব অভিরূপ চক্রবর্তীও। তাঁর দাবি, বারবার প্রশ্নের মুখে পড়লেও হুঁশ নেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের, কেন ক্যাম্পাসের সর্বত্র সিসিটিভি নেই, এই প্রশ্নও তুলেছেন ওই টিএমসিপি নেতা। এই ঘটনায় উপযুক্ত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বিজেপি নেতারাও। 

    যদিও এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই (SFI) নেতাদের প্রতিক্রিয়া জানতে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
  • Link to this news (প্রতিদিন)