আজকাল ওয়েবডেস্ক: নেপাল ভাবাচ্ছে রীতিমতো। একদিকে জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া একাধিক প্রাসাদ, ভবন, হোটেল। সময় যত এগোচ্ছে, ততই সামনে আসছে ভয় ধরানো ঘটনাবিবরণী। এবার প্রকাশ্যে এল আরও এক শিউরে ওঠা ঘটনা। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, ভারত থেকে নেপালে পশুপতিনাথ দর্শনে গিয়ে, বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছেন গাজিয়াবাদের ৫৫ বছরের এক মহিলা। গুরুতর আহত তাঁর স্বামীও।
ঘটনা সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ৭ সেপ্টেম্বর ওই মহিলা এবং তাঁর স্বামী রামভীর দিং গোলা, কাঠমান্ডুর পশুপতিনাথ দর্শনে গিয়েছিলেন। পরিস্থিতি এই মোড় নেবে, তা ভাবতেও পারেননি কেউ। জানা গিয়েছে, গাজিয়াবাদের ওই দম্পতি কাঠমান্ডুর হায়াত রিজেন্সিতে উঠেছিলেন। সেখানে বসেই বিক্ষোভের খুঁটিনাটিও জানছিলেন। তবে সেই বিক্ষোভ পৌঁছে যাবে বিলাসবহুল হোটেলের দরজায়, আঁচ করতে পারেননি।
তথ্য, ৯ সেপ্টেম্বর রাতে, বিক্ষুব্ধ জনতা আচমকা কাঠমান্ডুর হায়াত রিজেন্সি ঘিরে ফেলে এবং কিছুক্ষণেই আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি ততক্ষণে হাতের বাইরে। বাইরে বিক্ষুব্ধ জনতা, হোটেলে আগুন এবং ভিতরে আটকে থাকা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক, ভয়। ওই পরিস্থিতিতে নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য, ওই দম্পতি হোটেল থেকে ঝাঁপ দেন। হোটেলের পাঁচতলা থেকে তাঁরা ঝাঁপ দেন বলে তথ্য।
দু' জনেই গুরতর আহত হয়েছিলেন। এতক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা একসঙ্গে থাকলেও, তার পরেই একে অন্যের থেকে আলাদা হয়ে যান। বিক্ষুব্ধ জনতার মাঝখান থেকে তাঁদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় আলাদা আলাদা ভাবে। ভিড় পেরিয়ে রমভীর যখন ত্রাণ কেন্দ্রে পৌঁছন, তখন জানতে পারেন, তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও, সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে বড়। জানতে পারেন, মৃত্যু হয়েছে তাঁর স্ত্রীর।
তাঁদের ছেলে বিশাল, সংবাদ মাধ্যমের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। জানান, 'গিয়েছিলেন মন্দির দর্শনে। এমন পরিস্থিতি হবে, কল্পনাও করতে পারিনি।' ঘটনার বিবরণ দিয়ে গিয়ে তিনি আরও জানিয়েছেন, 'ঘুরতে গিয়েছিলেন, সেটাই আমার মায়ের শেষ যাত্রা হয়ে গেল। আমরা কেউ কল্পনা করতেই পারি না, এত বড় হোটেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটতে পারে। আমার বাবা-মা পাঁচতলা থেকে ঝাঁপ দেওয়া পর্যন্ত একসঙ্গে ছিলেন। তারপরেই আলাদা হয়ে যান। দুজনেই গুরুতর আহত হয়েছিলেন। হয়তো একসঙ্গে থাকলে মা বেঁচে যেতেন। উদ্ধারকারীরা প্রথমে মা' কে উদ্ধার করে নিয়ে যান। তারপর বাবা' কে। বাবা ত্রাণ কেন্দ্রে পৌঁছে মায়ের মৃত্যুসংবাদ পান।' শেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মহিলার দেহ আনা হয়েছে গাজিয়াবাদে।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যান, এবং সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা। রবিবার থেকে তা নিয়েই উত্তাল হিমালয়ের দেশ। রবিবারের পর, সোমবার আরও বাড়ে বিক্ষোভ। পুলিশ, বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে প্রাণ যায় বহু। সোমবার রাতেই সরকার 'নিষিদ্ধ' সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়। তবে তাতেও কমেনি ক্ষোভ। মঙ্গলবার বিক্ষোভ এমন পর্যায়ে যায়, পদত্যাগ করতে বাধ্য হন নেপালের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ওলি। তার মাঝেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন-সহ নানা জায়গায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে গিয়েছে সে দেশে। একপ্রকার পুড়ে খাক কাঠমান্ডু।