• 'পণ চাই', বেল্ট দিয়ে মার গৃহবধুকে! 'বিচার' চেয়ে পোস্টার নিয়ে ধর্নায় বসলেন যুবতী...
    আজকাল | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: পণ নিয়ে যুবতীর উপর নৃশংস অত্যাচার, কোথাও জীবন্ত পুড়িয়ে মারা, সাম্প্রতিককালে এই ঘটনা বারে বারে উঠে এসেছে। এবার পণ চেয়ে যুবতীর উপর অত্যাচারের অভিযোগ চুঁচুড়ায়। 'বিচার' চেয়ে পোস্টার হাতে ধর্নায় বসলেন যুবতী। 

    ঘটনাটি চুঁচুড়া চকবাজারের ২ নং সোনাটুলি এলাকার। যুবতী বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধে থেকে ধর্নায় বসেছেন। সঙ্গে তাঁর বাবা-মা' ও। জানা গিয়েছে, ওই যুবতীর নাম সাবিনা ইয়াসমিন। অভিযোগ, স্বামী নজরুলউদ্দিন গত জানুয়ারিতে তাঁকে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় কোনও দেনা-পাওনার কথা হয়নি। পণ নেয়নি ছেলের পরিবার। কিন্তু দাবি ওঠে কিছুদিন পর থেকেই। অভিযোগ, পণের দাবিতে বিয়ের কয়েকদিন পর থেকেই যুবতীর উপর অত্যাচার শুরু করেন স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন।  

    তথ্য, যুবকের আগেও বিয়ে হয়েছিল। যুবতী তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। সাবিনারও আগেই বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর কয়েক মাস পরে নজরুল সাবিনাকে নিয়ে বেঙ্গালুরুতে চলে যান। পরবর্তীতে তাঁকে বাড়িও পাঠিয়ে দেন। তারপর আর কোনও যোগাযোগ রাখেননি।

    বুধবার সাবিনা তাঁর বাবা-মাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে গেলে, শাশুড়ি তাঁকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ। সাবিনা চুঁচুড়া হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধেয় তাঁর বাবা-মাকে নিয়ে 'বিচার চাই' পোস্টার হাতে শ্বশুরবাড়ির সামনে ধর্নায় বসেন। খবর পেয়ে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে জড়ো হন। চু়ঁচুড়া থানার পুলিশ পৌঁছে আইনি পথে 'বিচার' চাইতে বলে। সাবিনা জানিয়েছেন, থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়ে উপযুক্ত শাস্তি দাবি করবেন।

    বৃহস্পতিবারেই সামনে আসে মহারাষ্ট্রের একটি ঘটনা। ময়ূরী গৌরভ তোসার। বয়স ২৩। চারমাস আগে বিয়ে হয়েছিল। সম্প্রতি ছিল জন্মদিনও। জন্মদিনের একদিনে পরেই চরম সিদ্ধান্ত মহারাষ্ট্রের জলগাঁওয়ের যুবতীর। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, ওই যুবতী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। ময়ূরীর মৃত্যুর পরেই তাঁর বাবা-মা শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে পণের জন্য বিয়ের পর থেকে লাগাতার মানসিক-শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন। 

    ময়ূরীর বাবা মা তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দ্রুত গ্রেপ্তারির দাবি জানিয়েছেন। সঙ্গেই তাঁদের দাবি, তাঁদের গ্রেপ্তারি পর্যন্ত মেয়ের দেহ ময়নাতদন্ত করতে দেবেন না তাঁরা। যদিও এখনও কোনও এফআইআর দায়ের হয়নি বলেই খবর সূত্রের। ময়ূরীর শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বয়ান বক্তব্য এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।

    ময়ূরীর মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসতেই ফের উঠে আসছে নিক্কির মৃত্যু। ২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর একই অনুষ্ঠানে নিক্কি এবং কাঞ্চন, ভাই বিপিন এবং রোহিতকে বিয়ে করেন। কাঞ্চনের অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের করা এফআইআর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিক্কিকে তাঁর স্বামী এবং শাশুড়ি দয়া আক্রমণ করেন। কাঞ্চন বাধা দিলে তাঁকেও মারধর করা হয়। বিপিন নিক্কির উপর দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। কাঞ্চনের রেকর্ড করা মর্মান্তিক দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে যে বিপিন নিক্কিকে আক্রমণ করছে। আরও একটি ক্লিপে দেখা যাচ্ছে যে জ্বলন্ত নিক্কি হোঁচট খাচ্ছেন সিঁড়ি দিয়ে। তাঁকে দ্রুত নিকটবর্তী একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে তাঁকে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে রেফার করা হয়, যেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। কাঞ্চন বলেন যে তিনি অভিযুক্তদের বলতে শুনেছেন, “ওকে মেরে ফেলো, শেষ করে দাও।” 

    এর আগে, ফেব্রুয়ারিতে, নিক্কি এবং কাঞ্চন সন্তানদের নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে এসেছিলেন। তারপর উভয় পক্ষের মধ্যে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছিল এবং বিপিন ক্ষমা চেয়েছিলেন। হোলির পরে দুই বোন তাঁদের স্বামীদের সঙ্গে ফিরে এসেছিলেন। নিক্কির ভাই বলেছেন, 'আমরা তাঁদের একটি সুযোগ দিয়েছিলাম, কিন্তু আমরা কল্পনাও করতে পারিনি যে তাঁদের মধ্যে এত নিষ্ঠুরতা ছিল।' তিনি আরও বলেন, 'দুই ভাই স্ত্রীদের সঙ্গে একই রকম আচরণ করেছিল। তাঁদের মা যা বলত, তাঁরা তাই করেছিল।' নিক্কির ভাই আরও জানিয়েছিলেন, বোনকে জ্বলন্ত অবস্থায় পুড়তে দেখে কাঞ্চন বেশ কয়েকবার অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

    সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে তথ্য, নিক্কি  বিপিনের একটি ছয় বছরের ছেলে আছে। সে তার মায়ের উপর হওয়া নির্যাতন এবং মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করেছে। নিক্কি মারা যাওয়ার পর কাঁপতে কাঁপতে সে জানিয়েছিল, 'তাঁরা প্রথমে মাম্মার উপর কিছু একটা চাপিয়ে দেয়। তারপর তাঁকে থাপ্পড় মারে এবং তারপর লাইটার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।'
  • Link to this news (আজকাল)