• পাড়ার 'বৌদি'কে নিয়ে পালানোর অভিযোগ বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে, দল বলল ওটা ব্যক্তিগত বিষয়...
    আজকাল | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: অবৈধ সম্পর্কের জড়িয়ে পড়ে গ্রামের এক ব্যক্তির স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠল মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার বিজেপির এক মন্ডল সভাপতির বিরুদ্ধে। ওই মন্ডল সভাপতির স্ত্রী সুতি বিধানসভা কেন্দ্রের মহেসাইল-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির নির্বাচিত সদস্যা। অভিযুক্ত সভাপতির নাম সোমনাথ দাস। তিনি সুতি বিধানসভা কেন্দ্রের তিন নম্বর মন্ডলের সভাপতি পদে রয়েছেন। জানা গিয়েছে, যে মহিলার সঙ্গে তাঁর পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁকে তিনি বৌদি বলে ডাকতেন। যদিও মন্ডল সভাপতির এই ধরনের কাজকে নিন্দা করার পরিবর্তে বিষয়টি 'ব্যক্তিগত' বলে এড়িয়ে গিয়েছেন জঙ্গিপুর সংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি সুবল ঘোষ। অভিযুক্ত সভাপতির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সুতি থানার দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁর স্ত্রী এবং যে মহিলাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর স্বামী। 

    ২৫ আসন বিশিষ্ট মহেসাইল-১ পঞ্চায়েতের বিজেপির নির্বাচিত সদস্যা মৌমিতা দাসের সঙ্গে প্রায় ৮ বছর আগে বিয়ে হয় সোমনাথের। বর্তমানে ওই দম্পতির দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে গ্রামের 'প্রভাবশালী' রাজনৈতিক নেতা হওয়ার সুযোগে বেশ কিছুদিন ধরেই ওই মুরালীপুকুর গ্রামের বাসিন্দা ক্ষুদিরাম দাস নামে এক ব্যক্তির স্ত্রী, রাজেশ্বরী ওরফে প্রিয়াঙ্কা দাসের সঙ্গে  সোমনাথের বিবাহ বহির্ভূত একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আগেও প্রিয়াঙ্কা দাসকে নিয়ে দু'বার সোমনাথ বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। গ্রামের কিছু লোকের মধ্যস্থতায় এবং দুই পরিবারের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তীকালে সোমনাথ এবং প্রিয়াঙ্কা দু'জনেই বাড়ি ফিরে এসেছিলেন।

    অভিযুক্ত বিজেপির মন্ডল সভাপতির স্ত্রী মৌমিতা দাস বলেন,' প্রায় আট বছর আগে আমাদের  বিয়ে হয়েছে। কিন্তু গত প্রায় চার বছর ধরে আমার স্বামী সোমনাথ দাস আমার বাবা-মায়ের কাছ থেকে অতিরিক্ত পণ আনার জন্য আমার উপর নিয়মিত শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করত।' তিনি জানান,'স্বামীর দাবি মত পণ এনে দিতে না পারায় জুলাই মাসের ১০ তারিখে আমার স্বামী মুরালীপুকুর গ্রামের বাসিন্দা  রাজেশ্বরী ওরফে প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে ঘর ছেড়েছেন।' মৌমিতা অভিযোগ করেন,'আমার স্বামী এখন আমার সঙ্গে থাকেন না। আমি শুনেছি ওই মহিলাকে নিয়ে আমার স্বামী দফাহাটে ভাড়া বাড়িতে থাকছেন। স্বামীর খোঁজ পাওয়ার পর সেখানে একবার আমি গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে চোর বলে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন আমি মুরালীপুকুর গ্রামে অন্য বাড়িতে বাবা -মায়ের সঙ্গে থাকছি।'

    অন্যদিকে 'নিখোঁজ' প্রিয়াঙ্কা দাসের স্বামী ক্ষুদিরাম দাস বলেন,' গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সোমনাথ দাসের নেতৃত্বে আমরা এই এলাকায় একসঙ্গে  দীর্ঘ সময় কাজ করেছি। সেই কারণে  সোমনাথের সঙ্গে আমাদের পরিবারের সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। সেই সুযোগ নিয়ে সোমনাথ আমার স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।' ওই ব্যক্তি অভিযোগ করেন,' বাড়িতে ছয় বছরের সন্তানকে রেখে আমার স্ত্রী এর আগেও দু'বার সোমনাথের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গ্রামের লোকেদের মধ্যস্থতায় আমি স্ত্রীকে আবার ফিরিয়ে নিয়েছিলাম।' ক্ষুদিরামের অভিযোগ,'সম্প্রতি ফের একবার আমার স্ত্রী সোমনাথের সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়েছে। আমার স্ত্রী এবং সোমনাথ কোথায় আছে জানি না। তবে একদিন আমাকে ফোন করে স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদ এবং সন্তানের অধিকার দাবি করেছে। কিন্তু আমি আমার ছেলেকে কাউকে দেব না এবং প্রিয়াঙ্কা বাড়িতে ফিরে এলে তাকে গ্রহণও করব না।'

    অন্যদিকে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজেপি মন্ডল সভাপতি সোমনাথ দাস।  ফোনে তিনি জানান,' প্রিয়াঙ্কার উপর তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা  প্রচন্ড অত্যাচার করত। সেই কারণে আমি একবার ওই মহিলাকে থানায় নিয়ে গিয়েছিলাম যাতে  তার লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে সুবিধা হয়।' সোমনাথ দাবি করেন,' এই মুহূর্তে আমি দলের রাজনৈতিক কাজে ব্যস্ত রয়েছি। ওই মহিলা কোথায় রয়েছে সে ব্যাপারে আমার কোনও ধারনাই নেই। যেহেতু একসময় আমি তাঁকে পুলিশ অভিযোগ জানাতে সাহায্য করেছিলাম সেই কারণে তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন।' গোটা ঘটনা প্রসঙ্গে বক্তব্যের জন্য বিজেপির জঙ্গিপুর সংগঠনিক জেলা সভাপতি সুবল ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'এগুলো ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক ঘটনা। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগাযোগ নেই। রাজনীতি বহির্ভূত ঘটনা সম্পর্কে আমি কোনও মন্তব্য করব না।' বিজেপির মন্ডল সভাপতি এই কাণ্ড শুনে সুতির তৃণমূল বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস বলেন,' যার যেটা চরিত্র সে সেটা করবেই। বিজেপি নেতাদের আসল রূপ এবার মানুষ দেখতে পাচ্ছে। বিজেপি নেতাদের জন্য এখন বাড়ির মহিলারাও সুরক্ষিত নয়।'
  • Link to this news (আজকাল)