যাদবপুরে ছাত্রী-মৃত্যু, 'অনুষ্ঠানের অনুমতি' ছিল কি না তরজা তা নিয়ে, তৃণমূল বলছে, 'ওঁরা নিয়ম মানে না, বানাতে চায়'...
আজকাল | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: রুহানিয়ৎ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রামা ক্লাব আয়োজিত অনুষ্ঠান। হইচই, অনুষ্ঠান, গানবাজনার মাঝেই শোকের বাতাবরণ। বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশ্যে আসে, হুল্লোড়ের মাঝেই, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতরেই মৃত্যু হয়েছে এক ছাত্রীর। ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীর পরিচয়। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তোলপাড়। কেউ কেউ স্বপ্নদীপের প্রসঙ্গ টেনে আনছেন। কেউ কেউ ফের যাদবপুরের সিসিটিভি ইস্যু নিয়ে সরব হয়েছেন।
ঘটনার নতুন মোড় শুক্রবারে। শুক্রবার সকাল থেকে আলোচনা, অনুষ্ঠানের 'অনুমতি' নিয়ে। সংবাদমাধ্যমে যাদবপুরের সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত ড্রামা ক্লাবের অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়া হলেও, বেশি রাত পর্যন্ত চলার অনুমতি নেওয়া হয়নি। তেমনটাই খবর সূত্রের। যদিও তিনিই আবার জানিয়েছেন, অনেক সময়েই নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যায় অনুষ্ঠানের।
অনুমতি কতক্ষণের ছিল? প্রশ্নের খোঁজে ড্রামা ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলে, কেউ কেউ ফোন ধরেননি, কেউ আবার সাফ জানিয়েছেন তিনি কিছু বলতে পারবেন না ঘটনা সম্পর্কে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এক গবেষক এই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন কিছুটা। তাঁর বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয় অনুমতি দিয়েছিল, দিয়েছিল বিদ্যুৎ বিভাগও। নইলে স্টল দেওয়াই যেত না। সময় কতক্ষণ? বহু বছরের অভিজ্ঞতায় তিনি জানান, 'লিখিত অনুমতি অনেক রাত্রি পর্যন্ত অনুষ্ঠানের থাকে না ঠিকই। কিন্তু অভিজ্ঞতায় জানি, অনেক সময় অনুষ্ঠান ১১-১১.৩০টা পর্যন্ত চলে। স্বাভাবিক ঘটনা এসব।' একই সঙ্গে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠান এবং স্টলের কারণে বেশকিছু দৃষ্টিহীন পড়ুয়া রেজিস্ট্রারের অফিসে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, তাঁদের চলাফেরায় সমস্যার কথা।
এই ঘটনায় সরব তৃণমূল কংগ্রেস। অনুমতি কতক্ষণের? কতক্ষণ চলতে পারে? এই বিষয়ে তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'যাদবপুরের পড়ুয়ারা প্রত্যেকে, প্রত্যেক বিষয়ে নিজের গা জোয়ারি করেন। তাঁরা বরাবর এসব করেছেন। নিয়ম বহির্ভূত কাজ করেছেন। নিয়মের তোয়াক্কা না করে, নিয়ম বানানোর চেষ্টা করেছেন। নিজেদের কায়েমি সত্বা বজায় রাখতেই আদতে ওঁরা গা জোয়ারি করেন। সিসিটিভিতে আপত্তি, এতদিন পর্যন্ত খোলা ছিল ইউনিয়ন রুমও। অনুমতি কী নিয়েছে, কতক্ষণের, আমি জানি না। কিন্তু তাঁরা যে নিয়মের ধার ধারেন না, তা জানি।'
উল্লেখ্য গতকালই ঘটনা প্রসঙ্গে পোস্ট করেছিলেন তিনি। টিএমসিপির রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, 'যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে এক ছাত্রীর মৃত্যুর খবরে আমি শোকস্তব্ধ। ঘটনাটি ঘটেছে ৪ নং গেটের কাছে এসএফআই ইউনিউন রুমের পাশে। এটি অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক। দু'বছর আগে স্বপ্নদীপের মৃত্যু দেখেছি, আজ আবার একজন। ক্যাম্পাসে সিসিটিভি লাগানো ও স্থায়ী পুলিশ পোস্টিং আমাদের বরাবরের দাবী। এইগুলো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। যারা সিসিটিভি লাগানো ও পুলিশ পোস্টিং-এর বিরুদ্ধে, তারা এর দায়ভার এড়াতে পারে না। আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মুহুর্তে স্থায়ী উপাচার্যের অভাবে কাজকর্ম বিঘ্নিত হচ্ছ। আমরা অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারা মনোনীত স্থায়ী উপাচার্য্য চাই।'
সুদীপ রাহা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, 'যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসিটিভির প্রয়োজনীয়তা কতটা, তা আবার প্রমাণ হয়ে গেল। সেদিন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলাম, এই খারাপ দিনগুলোকে না দেখার জন্যেই। অনেক হুমকি-ধমক-ঈর্ষা-কুকথার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে লড়াই হয়েছিল। আদালতের নির্দেশ ছিল সিসিটিভির পক্ষে। কার্যক্ষেত্রে কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, তাও প্রকাশ্যে আসবে। দেশের প্রথম সারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এরকম অস্বাভাবিকভাবে ছাত্রী মৃত্যুর ঘটনা অনভিপ্রেত এবং উদ্বেগজনক। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। সন্তানহারা শোকসন্তপ্ত পরিবারকে শোকজ্ঞাপনের ভাষা নেই। সর্বতোভাবে পরিবারের পাশে থাকবো।'
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত্রি দশটা সাড়ে দশটা নাগাদ যাদবপুর ইউনিভার্সিটির চার নম্বর গেটের সামনে পুকুরে ওই ছাত্রীকে ভাসমান অবস্থায় দেখা যায়। বাকি ছাত্র-ছাত্রীরা ওই পড়ুয়াকে ওই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেই তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করার চেষ্টা করে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়। তৎক্ষণাৎ অ্যাম্বুলেন্স ডেকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে সিপিআর দিয়ে জল বের করার চেষ্টা করে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু লাভ হয়নি। হাসপাতালের তরফে ওই পড়ুয়াকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।