দুর্গা পুজোর অর্থনৈতিক দিক নিয়ে সম্প্রতি কিছু বিতর্ক বা কথা হচ্ছে। সেই বিষয়ে আমার এই লেখার মধ্যে কোনও অভিমত নেই। শুধু সেই প্রেক্ষিতে উৎসাহিত হয়ে দুর্গা পুজোর খরচ নিয়ে সামান্য কৌতূহল জাগল আমার। খোঁজখবর করে কিছু বইপত্রের হদিস পেলাম। তার মধ্যে হরিপদ ভৌমিকের লেখা ‘ সেকালের কলকাতা কত গল্প কত কথা’ বইতে ১৮৪৯ এবং ১৯৭৮-এর বিভিন্ন দ্রব্যের, যা সাধারণত দুর্গা পুজোয় লাগে, মূল্যের তুলনামূলক তালিকা পেলাম। তারপর জানতে শুরু করলাম সেই সব জিনিসের একেবারে সাম্প্রতিক দর। নদিয়া বর্ধমান দুই চব্বিশ পরগণা এবং কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে যোগাড় করলাম সব জিনিসের দাম। তারপর একটা মোটামুটি গড় দামে পৌঁছলাম। এই তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখলাম, জেলা ও মফসসলের সঙ্গে কলকাতার দরে বেশ কিছুটা ফারাক থাকছে। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক।
নদিয়ার বগুলা বা আড়ংঘাটার কাছে ভালো মাখা সন্দেশ ৩০০ টাকা প্রতি কেজি। কলকাতায় সেটাই প্রায় ৫০০-৬০০ টাকা। আবার অনেক সংখ্যা বা পরিমাণে কিনতে হলে কলকাতার বড় বাজারে পাইকারি বাজার থেকে যদি কেনা যায় তাহলে, খুচরো বাজার থেকে প্রায় ২০-৩০ শতাংশ বা কিছু কিছু জিনিসে তার থেকেও বেশি দাম কম পরে। গড়ে। আইটেম অনুযায়ী এই হারের কম বেশি হয়। কিন্তু পাইকারি বাজারের নির্দিষ্ট করে দেওয়া পরিমাণে কিনতে হবে, তবেই এই লাভটা পাওয়া যাবে। সহজ কথা। সবাই জানি। ওই ২০-৩০ শতাংশের ওপর খুচরো দোকানদারদের সংসার চলে।
মূল্য- টাকায়
দ্রব্য ১৮৪৯ ১৯৭৮ ২০২৫
ঝুনো নারকেল ১টা ০.১ ১.৫০ ৩৫.০০–৪০.০০
ডাব ১টা ০.৭৫ ০.৭৫ ৫০.০০-৬০.০০
চালকুমড়ো ১টা ০.০২ ১.৫০ ৪০.০০
পটল ১ কেজি ০.০৩ ৩.০০ ৬০.০০
বাতাবি লেবু ১টা ০.০১ ০.৮০ ২০.০০–২৫.০০
আনারস ১টা ০.০৫ ২.০০ ৮০.০০–১০০.০০
লবঙ্গ ১২৫ গ্রাম ০.০৯ ১৫.০০ ২১২.০০
ঘি ১ কেজি ০.৪০ ৩০.০০ ৮০০.০০
গরুর দুধ ১ সের ০.০৬ ৩.০০ ৫০.০০
(প্যাকেটের আরও বেশি)
মধু ১কেজি ০.১০ ২০.০০ ৪০০.০০
মাখা সন্দেশ ১ কেজি ০.৩০ ১৬.০০ ৪০০.০০
দই ১ কেজি ০.০৩ ৯.২৫ ৩৫০.০০
জিরে ১০০ গ্রাম ০.০৩ ০.৯৫ ৪৫.০০
ধামা বড় ১টা ০.১১ ৪.০০ ৪০.০০
প্রদীপ ২৫ টা ০.০৩ ০.৫০ ৪০.০০ – ৫০.০০
সোনা ১ ভরি ১৪.০০ ৮২০.০০ ১১০০০.০০/গ্রা,
(২৪ ক্যারেট)
তাঁতের শাড়ি সূতি ১টা ০.৬৯ ২০.০০ ৫০০.০০-৬০০.০০
এক জোড়া সাদা ধুতি ১.৭৫ ৩০.০০ ৬০০-৮০০.০০
মর্তমান কলা ১০টা ২.৫ ৭.০০ ৮০.০০
কাঁঠালি কলা ২০টা ০.০১ ৪.২০ ১০০.০০
ভালো চাল ১ মণ ১.১২ ১৮৫.০০ ২২০০.০০–২৫০০.০০
(প্রায় ৩৭ কেজি)
সের-কে কেজিতে বা আনা পয়সার হিসেব মেলাতে সামান্য হের ফের হতে পারে। একটা চিত্র আমরা পাচ্ছি। এবং ভাবছি, আমাদের গেছে যে দিন … আয় বা রোজগারের তুলনামূলক তালিকাও পাশাপাশি রেখে দেখলে বিষয়টা ঠিক হয়। সে আরও গভীর বিশ্লেষণ দরকার। তবে আন্তর্জাল ও কিছু ব্যক্তিগত স্তরে খোঁজ করে জানলাম, মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় আয় সমানুপাতিক নয়। অসংগঠিত ক্ষেত্রে তো একেবারেই নয়। করোনার পরে ব্যাপারটা আরও এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। যা এই তালিকা দেখে আজ আমরা ভাবছি পঞ্চাশ বছর পরের প্রজন্মের পাঠক ভাববে ঠিক তাই!