উন্নত উত্তরপ্রদেশ গড়তে ‘বিকশিত ইউপি@২০৪৭’ মিশন, যোগী সরকারের নয়া পদক্ষেপ
প্রতিদিন | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
হেমন্ত মৈথিল, লখনউ: উন্নয়নের পথে এক নতুন ইতিহাস গড়তে চলেছে উত্তরপ্রদেশ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘বিকশিত ভারত’কে অঙ্গীকার করে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ২০৪৭ সালের মধ্যে উত্তরপ্রদেশকে ৬ ট্রিলিয়ন অর্থনীতির রাজ্যে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়েছেন। এই বিশাল লক্ষ্য পূরণের জন্য ‘বিকশিত ইউপি@২০৪৭’ নামে একটি বিশেষ মিশন শুরু হয়েছে।
২০১৭ সালের আগে উত্তরপ্রদেশ ছিল বিনিয়োগহীন এক রাজ্য। অরক্ষিত পরিবেশের কারণে শিল্প ও কারখানা সেভাবে গড়ে ওঠেনি। কিন্তু গত সাড়ে আট বছরে এই চিত্র পুরোপুরি বদলে গেছে। বর্তমানে উত্তরপ্রদেশে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক নতুন ভরসা ও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশে প্রায় ৪৫ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব ইতিমধ্যে জমা পড়েছে। এর মধ্যে ১৫ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ বাস্তবে কার্যকর হয়। ফলে ৬০ লক্ষের বেশি যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়াও লক্ষ লক্ষ পরিবার স্বনির্ভর প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন।
এমনকী ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ১০ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের কাজ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই।
রাজ্য সরকার উদ্যোক্তাদের জন্য ৩৩টি নতুন নীতি প্রনয়ণ করেছে। ‘নিবেশ মিত্র’ নামে একটি ডিজিটাল পোর্টাল চালু হয়েছে। এটি ভারতের সবচেয়ে কার্যকরী সিঙ্গেল-উইন্ডো পোর্টাল। টেক্সটাইল, চামড়া, প্লাস্টিক, পারফিউম, কেমিক্যাল এবং ফার্মা পার্কগুলো দ্রুত তৈরি হচ্ছে। যেমন, হারদোই-কানপুরে চামড়ার ক্লাস্টার, গোরখপুরে প্লাস্টিক পার্ক এবং কনৌজে পারফিউম পার্ক তৈরি করা হচ্ছে। এর ফলে উত্তরপ্রদেশ একটি নতুন শিল্প কেন্দ্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে।
আজ উত্তরপ্রদেশ দেশের সবচেয়ে বড় MSME (ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি শিল্প)। এখানে ৯৬ লক্ষেরও বেশি সক্রিয় MSME ইউনিট রয়েছে। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদী কর্তৃক ঘোষিত ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডর, রাজ্যকে এক নতুন সামরিক শক্তি দিয়েছে। আগ্রা, আলিগড়, কানপুর, লখনউ, ঝাঁসি এবং চিত্রকূটের ৬টি কেন্দ্রে দ্রুত কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত ১৭০টিরও বেশি মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মাধ্যমে ২৮০০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে ৪৬০০টিরও বেশি নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে। আদানি গ্রুপ, এআর পলিমার, এমিটেক ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ব্রাহ্মোসের মতো বড় বড় প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলো ইতিমধ্যে তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। কানপুরে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম তৈরি হচ্ছে। আলিগড়ে ছোট অস্ত্র ও রাডার প্রযুক্তি নিয়ে কাজ চলছে। লখনউয়ে ব্রাহ্মোস মিসাইলের উৎপাদন শুরু হওয়াটা একটি বড় সাফল্য। এটি উত্তরপ্রদেশকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান প্রতিরক্ষা উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করবে।
বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের জিএসডিপি প্রায় ৩৫৩ বিলিয়ন। ২০৩০ সালের মধ্যে ১ ট্রিলিয়ন, ২০৩৬ সালের মধ্যে ২ ট্রিলিয়ন এবং ২০৪৭ সালের মধ্যে ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে রাজ্যকে ১৬% বার্ষিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে হবে। এই যাত্রায় বিনিয়োগ এবং প্রতিরক্ষা শিল্পই হবে দুটি প্রধান চালিকাশক্তি।