• ভোটার তালিকা সংশোধন কাজে অতিরিক্ত চাপের অভিযোগ...
    আজকাল | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারের ভোজপুর জেলার আরা শহরের মৌলাবাগ অবস্থিত এসবি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) সুপারভাইজার রাজেন্দ্র প্রসাদ (৫৯) গত ২৭ আগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পরিবারের অভিযোগ, বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধন (Special Intensive Revision – SIR) সংক্রান্ত অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়মিত তিরস্কারের ফলে তার এই করুণ মৃত্যু হয়েছে। প্রসাদ মাত্র চার মাস পর, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর অবসর নিতেন।

    রাজেন্দ্র প্রসাদের ছেলে আশিষ রাজ (২৮) জানান, “প্রতিদিন আমি বাবাকে স্কুলে পৌঁছে দিতাম। কিন্তু ২৩ আগস্ট আমি পরীক্ষার জন্য বারাণসী গিয়েছিলাম। ওই সময়ে বাবার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়। প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, পরে পাটনার আইজিআইএমএস-এ রেফার করা হয়। কিন্তু ভিড়ের কারণে আমরা এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করি, সেখানেই তাকে আইসিইউ-তে রাখা হয়।”

    কন্যা দীপশিখা (২৬) বলেন, “আমি একদিন স্কুলে গিয়েছিলাম। তখন বাবাকে ফোনে জানানো হয়, পাঁচ মিনিটের মধ্যে অফিসে না পৌঁছালে চাকরি যাবে। বাবা উত্তর দিয়েছিলেন যে তিনি কাজ করছেন, কেন এমনভাবে বলা হচ্ছে। সেই ঘটনার পর থেকেই বাবা ভীষণ ভীত হয়ে যান এবং চুপচাপ হয়ে পড়েন।”

    স্ত্রী আনারকলি দেবী (৫৮) জানান, স্বামী সাধারণত কাজের চাপ নিয়ে বাড়িতে কিছু বলতেন না। তবে গত দুই মাস ধরে তিনি খুবই বিরক্ত ও অস্থির হয়ে পড়েছিলেন। মেয়েরাও লক্ষ্য করেছিলেন, বাবার স্বভাব বদলে গেছে। ছোট মেয়ে কল্যাণী রানি, যিনি সদ্য প্রি-পিএইচডি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, জানান, শেষবার ফোনে কথা বলার সময় বাবা খুশি হয়েছিলেন, কিন্তু সময় কম থাকার  কারণে বেশি কিছু বলতে পারেননি। পরে আইসিইউ-তে তিনি কণ্ঠস্বর হারিয়ে ফেলেন।

    প্রসাদের বড় বোন শান্তি দেবী বলেন, “ভাই এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে ফোন করলেই বলতেন পরে কথা বলব, কাজ আছে।” পরিবারের অভিযোগ, মৃত্যুর পর শিক্ষা দপ্তর বা প্রশাসনের কেউই খোঁজখবর নিতে আসেননি, কোনও ক্ষতিপূরণও মেলেনি। অন্যদিকে আরা সদর ব্লকের বিডিও রবি রঞ্জন পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি কখনও তাকে তিরস্কার করিনি। তিনি যদি অসুস্থতার কথা জানাতেন, তাহলে আমরা কাজের চাপ দিতাম না।” জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মনবেন্দ্রও জানান, এ ঘটনার খবর তিনি সাংবাদিকদের কাছ থেকে জেনেছেন।

    রাজেন্দ্র প্রসাদের সহকর্মী ও আত্মীয় তেজ বাহাদুর বলেন, “শুধু ওনার নয়, বহু বিএলওর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে এই এসআইআর কাজের চাপে। এত বড় কাজ এত অল্প সময়ে শেষ করতে বলা ঠিক নয়।” অনেক বিএলও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থেকে অভিযোগ করেন, বৈঠকের নোটিশ মাত্র দশ মিনিট আগে দেওয়া হয়, বন্যা বা খারাপ রাস্তার মধ্যেও সময়মতো হাজির হতে হয়, নইলে ধমক খেতে হয়। এতে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি পারিবারিক জীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

    সারণ জেলার সোনপুর ব্লকের বিএলও সঞ্জয় কুমার বলেন, “এসআইআর চলাকালীন প্রচণ্ড চাপের মধ্যে কাজ করতে হয়েছে। বন্যার মধ্যেও কাজ করতে হয়েছে, উপর থেকে আবার কর্মকর্তাদের তাড়া।” অন্য একজন জানান, “৫০–৫৫ বছর বয়সে শিক্ষক হয়েও আমাদেরকে কর্মকর্তাদের কটূক্তি সহ্য করতে হয়।” বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ নিয়ে বহুদিন ধরেই মাঠপর্যায়ের কর্মীদের ক্ষোভ বাড়ছিল। রাজেন্দ্র প্রসাদের মৃত্যু সেই ক্ষোভকে আরও উসকে দিয়েছে। পরিবার ও সহকর্মীদের দাবি, সরকারের উচিত বিএলও ও শিক্ষকদের জীবন-ঝুঁকি কমাতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া।
  • Link to this news (আজকাল)