সুপ্রিম কোর্টে উমর খালিদসহ চার অভিযুক্তের জামিন শুনানি স্থগিত...
আজকাল | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লি দাঙ্গার তথাকথিত “বৃহত্তর ষড়যন্ত্র মামলা”-য় অভিযুক্ত চার জন শিক্ষার্থী-অধিকারকর্মী উমর খালিদ, শারজিল ইমাম, মীরান হায়দার ও গালফিশা ফাতিমার জামিন আবেদন সংক্রান্ত শুনানি আজ (শুক্রবার) সুপ্রিম কোর্ট স্থগিত করেছে। মামলাটি আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর পুনরায় শোনা হবে। আজ মামলাটি বিচারপতি অরবিন্দ কুমার ও বিচারপতি এন. ভি. আঞ্জারিয়ার ডিভিশন বেঞ্চে তালিকাভুক্ত ছিল। তবে বিচারপতি কুমার জানান, মামলার সম্পূরক তালিকার নথিপত্র বৃহস্পতিবার রাত ২.৩০টায় হাতে আসে, ফলে তিনি এই দিন বিষয়টি নিতে অস্বস্তি বোধ করছেন।
এর আগে ২ সেপ্টেম্বর দিল্লি হাইকোর্ট নয়জন অভিযুক্তের জামিন আবেদন খারিজ করে দেয়। বিচারপতি নবীন চাওলা ও শালিন্দর কৌরের বেঞ্চ উমর খালিদ, শারজিল ইমাম, মীরান হায়দার ও গালফিশা ফাতিমাসহ আথার খান, খালিদ সাইফি, মোহাম্মদ সেলিম খান, শিফাউর রহমান ও শাদাব আহমেদের আপিল নামঞ্জুর করে। এই সবাইকে ২০২০ সালের প্রথম নয় মাসের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আজ একই দিনে দিল্লি হাইকোর্টের আরেক বেঞ্চ বিচারপতি সুব্রহ্মণ্যম প্রসাদ ও বিচারপতি হরিশ বৈদ্যনাথন শংকর অভিযুক্ত তসলিম আহমেদের জামিন আবেদনও খারিজ করে।
উল্লেখ্য, বিতর্কিত এফআইআর ৫৯/২০২০ দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল দায়ের করে ভারতীয় দণ্ডবিধি ও বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন বা ইউএপিএ-এর বিভিন্ন ধারায়। দিল্লি পুলিশের তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বহু মানবাধিকার সংগঠন। তাদের অভিযোগ, এই মামলায় মূল প্রমাণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে সিএএ বিরোধী আন্দোলনের সময় অভিযুক্তদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে উপস্থিতি ও আলোচনাকে। মানবাধিকার রক্ষাকারীরা বলছেন, দীর্ঘ কারাবাস, একের পর এক আপিল খারিজ ও শুনানি পিছিয়ে দেওয়া — সব মিলিয়ে এই মামলাটি বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা নষ্ট করছে এবং ন্যায়বিচারের এক নির্মম ব্যঙ্গচিত্র তৈরি করেছে।
মানবাধিকার কর্মীদের মতে, দিল্লি দাঙ্গার মামলায় ইউএপিএ-এর ব্যবহার আসলে রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। তারা অভিযোগ করেছেন, দাঙ্গার মূল পরিকল্পনাকারীরা শাস্তি এড়িয়ে যাচ্ছে, অথচ সরকারের সমালোচনাকারী শিক্ষার্থী ও নাগরিক আন্দোলনের কর্মীদের বছরের পর বছর ধরে জামিন ছাড়া বন্দি রাখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল থেকেও এই মামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো সংগঠনগুলো বারবার বলেছে, মামলাটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার আড়ালে গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর আঘাত। সুপ্রিম কোর্টের আসন্ন শুনানিকে তাই অনেকে ‘ন্যায়বিচারের পরীক্ষা’ হিসেবে দেখছেন।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মামলায় দিল্লি পুলিশের অভিযোগপত্র দুর্বল ও পরস্পরবিরোধী। একাধিকবার আদালতে প্রশ্ন উঠেছে যে কেবলমাত্র প্রতিবাদ কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তা আদানপ্রদান করাকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখানো কতটা বৈধ। তবুও নিম্ন আদালত ও হাইকোর্ট ধারাবাহিকভাবে জামিন প্রত্যাখ্যান করেছে। অভিযুক্তদের পরিবার বলছে, বছর পর বছর মামলার শুনানি পিছিয়ে দেওয়া তাদের জন্য মানসিক ও আর্থিক নির্যাতনের শামিল। শিক্ষাবিদ ও প্রাক্তন বিচারপতিরাও মত দিয়েছেন যে, এই মামলার মাধ্যমে গণআন্দোলনের উপর ভয় সঞ্চার করার চেষ্টা চলছে। ফলে, ১৯ সেপ্টেম্বরের শুনানি সবার নজর কেড়ে নিয়েছে।