• লোকগাথার হাত ধরেই বিস্মৃতপ্রায় শিল্পরক্ষার বার্তা
    বর্তমান | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: আমাদের শহুরে জীবনজুড়ে আধুনিকতার জোয়ার। প্রযুক্তির হাত ধরে ক্রমাগত ছুটে চলার মাঝে স্মৃতিপটে ক্রমেই আবছা হয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার বিভিন্ন প্রাচীন লোকশিল্প। এবারের পুজোয় সেই হারিয়ে যাওয়া লোকশিল্পকেই ফিরিয়ে আনছে দক্ষিণ কলকাতার দুই পুজো উদ্যোক্তা।

    গ্রামীণ কৃষ্টিকে ফিরে দেখা শুরু হোক যাদবপুর থেকে। সুলেখা মোড়ের কাছে রামকৃষ্ণ উপনিবেশের এবারের থিম ‘লোককৃষ্টি’। শিল্পী সুরজিৎ রায়চৌধুরী জানালেন, বাংলার বিভিন্ন প্রাচীন লোকশিল্পকে কীভাবে এক সুতোয় গাঁথা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছিল। এবছর বঙ্গজীবনের কৃষ্টিকে তুলে ধরা হচ্ছে উত্তরবঙ্গের কবির লড়াই, বর্ধমানের বহুরূপী, নদীয়ার পুতুল নাচ, মেদিনীপুরের পটের গানের মাধ্যমে। পাশাপাশি মণ্ডপে থাকছে গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের তৈরি নানা জিনিসের স্টল। বহরমপুরের পাটের 

    কাজ, মাঠা গ্রামের মধু থেকে গ্রামীণ হস্তশিল্প—মিলবে সবই। প্রতিমাতেও থাকবে লোকসংস্কৃতির ছোঁয়া। পুজো কমিটির দাবি, গ্রাম বাংলার একরাশ সংস্কৃতির মধ্যে নজর কাড়বে পটের গান। মণ্ডপে যাওয়ার পথের দু’দিকেই থাকবে পটচিত্র। শিল্পীরা গান গেয়ে সেই চিত্রের অর্থ বোঝাবেন দর্শনার্থীদের। চলতি বাংলা-বাঙালি ইস্যুতে রামকৃষ্ণ উপনিবেশের এই প্রয়াস এক অনন্য গুরুত্ব বহন করবে বলে আশা উদ্যোক্তাদের।

    যাদবপুরে লোককৃষ্টির স্বাদ নিয়ে পরের গন্তব্য বাঘযতীন বিবেকানন্দ মিলন সঙ্ঘ। এবারের পুজোয় তাদের ভাবনাজুড়ে বাংলার ‘লোকগাথা’। গম্ভীরা ও গোমিরা—আজকের আর্টিফিশিয়াস ইন্টেলিজেন্সের (এআই) যুগের শিশু-কিশোরদের কাছে এই নামদু’টি ভীষণ অচেনা। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে মালদহের সঙ্গে জড়িয়ে গম্ভীরার নাম। ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে সামাজিক চালচিত্রের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলা হয় গম্ভীরার মাধ্যমে। পাশাপাশি, গোমিরা নৃত্যের মধ্যে দিয়ে অশুভ শক্তিকে বিনাশ ও শুভ শক্তিকে আহ্বান জানান দক্ষিণ দিনাজপুরের মানুষজন। পুজোর চারদিন মণ্ডপের সামনে মুখে শক্ত কাঠের ভারী মুখোশ এঁটে চলবে এই দুই শিল্পের প্রদর্শন। সাবেকি প্রতিমা তৈরি করছেন শিল্পী গিরীশ ঘোষ। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা সুমন বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, বর্তমান হাইটেক যুগে গোমিরা, গম্ভীরার মতো ঐতিহ্য নিয়ে বিশেষ কোনও আগ্রহ নেই। দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে দর্শনার্থীদের সামনে বাংলার হারিয়ে যাওয়া শিল্প তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য।  মণ্ডপসজ্জার কাজ চলছে রামকৃষ্ণ উপনিবেশে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)