সঙ্গে নেই পুত্র-কন্যা, এখানে মা একা! শান্তিপুরের রায়বাড়িতে ‘কুলোদেবী’ নামে পূজিত দুর্গা
প্রতিদিন | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: গ্রামবাংলার পুজোয় দেবীর নানান রূপ। প্রচলিত বহু কাহিনি। তবে শান্তিপুরের রায়বাড়ির পুজো যেন একদম আলাদা। সর্বত্রই মা সন্তানদের সঙ্গেই পূজিত। আর এখানেই ব্যাপক চমক রায়বাড়ির ঠাকুরদালানে। এলেই দেখতে পাবেন দেবী দুর্গা এখানে এক্কেবারে একা পূজিত। নেই লক্ষী-সরস্বতী, গণেশ-কার্তিক। ৫০০ বছর ধরেই এভাবেই চলছে পুজো। প্রথম দিকে কুলোকে দেবী জ্ঞানে পুজো করতেন রায় বাড়ির পূর্বপুরুষরা। পরে প্রতিমা তৈরি করে পুজো শুরু।
রায় পরিবার আদতে হুগলির চুঁচুড়ার বাসিন্দা। তৎকালীন গৃহকর্তা গৌরহরি ঠাকুর। অর্থনৈতিক অনটন প্রতিদিনের সঙ্গী। কথিত আছে, একদিন গৃহদেবতার পুজোর আয়োজন করছেন গৌরহরি। সেই সময় তৃষার্ত এক মহিলা তাঁর কাছে জল চান। গৌরহরি তাঁর কাছে থাকা গঙ্গাজল ও নাড়ু দেন মহিলা। পরদিন রাতে স্বপ্নাদেশ পান গৌরহরি। তৃষ্ণার্ত নারী আসলে দেবী দুর্গা। এবং তাঁকে পুজো শুরুর নির্দেশ দেন তিনি।
দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে চিন্তায় পড়লেন গৌরহরি। পুজোর খরচ বহন করবেন কী করে তা ভেবে আন্তাতরে তিনি। কুলোর উপর দেবী ছবি এঁকে শুরু হয় পুজো। নাম দেওয়া হয় ‘কুলো দেবী’। এদিকে মুঘলদের অত্যাচারে চুঁচুড়ায় থাকতে পারেনি রায় পরিবার। পালিয়ে আসে শান্তিপুরে। তারপর থেকে অবস্থার পরিবর্তন। কুলো দেবীর পুজোও ক্রমশ বৃহৎ আকার পায়।
পুজোর রীতিতেই রয়েছে বেশকিছু নিয়ম। পুজোর আগে ভাজা হয় আনন্দ নাড়ু। নবমীতে মাকে মাছের প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এককালে বলির প্রথার প্রচলন থাকলেও, এখান পশুবলি বন্ধ। আঁখ ও কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। দশমীর দিন পায়েস মেখে বিদায় জানানো হয় মাকে।