• ৫০ দিন ভেন্টিলেশনে, কোমাচ্ছন্ন যুবকের পুনর্জন্ম এম আর বাঙুর হাসপাতালে
    প্রতিদিন | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • গৌতম ব্রহ্ম: গাড়ি চালাতে গিয়েই ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বর্ধমান মেডিক‌্যালে নিউরো সার্জারি হলেও কার্যত কোমায় চলে যায় ৩৭ বছরের যুবক। ব্রেনের শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণকারী অংশ বিদ্রোহ করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। দেখা দিয়েছিল ‘অ‌্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম’। তার উপর সেপসিসের ছোবলে অকেজো হয়ে যায় কিডনি, লিভার। তাই ভেন্টিলেশনে রেখে কৃত্রিমভাবে বাঁচানোর চেষ্টা শুরু হয় রোগীকে। আশার কথা, টালিগঞ্জের এম আর বাঙুর হাসপাতাল সেই কোমায় চলে যাওয়া যুবককে নতুন জীবন দান করল। বুধবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান রোগী।

    সমর দাস। বাড়ি আসানসোলের রানিগঞ্জে। ২০ জুন বাঙ্গুরের সিসিইউ-তে রেখে চিকিৎসা শুরু হয় এই কোমাচ্ছন্ন যুবকের। ট্র‌্যাকিওস্টমি করে কৃত্রিমভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস চালানোর ব্যবস্থা হয়। সেই থেকেই টানা ৫০ দিনেরও বেশি অস্থায়ী ঠিকানা হয়ে গিয়েছিল সিসিইউ-র ৭০৩ নম্বর বেড।  একদিকে চলছিল অ‌্যান্টিবায়োটিকস অন‌্যান্য জীবনদায়ী ওষুধ, ইঞ্জেকশন। অন্যদিকে চলছিল চেস্ট ফিজিওথেরাপি। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, সব একটি অ‌্যান্টিবায়োটিকও বাইরে থেকে কিনতে হয়নি রোগীর পরিবারকে। হাসপাতালে সরবরাহ হওয়া ওষুধ আর ইঞ্জেকশনের জোরেই চিকিৎসা চলেছে।

    ডাক্তারদের একটি টিম দিনরাত এক করে লড়াই চালিয়েছেন। ডা. ওয়াই চৌহান, ডা. অনির্বাণ ভট্টাচার্য ও সোহম সামন্ত। এছাড়া অতন্দ্র প্রহরীর মতো রোগীকে আগলে রেখেছেন নার্স ও অন্যান্য কেয়ারগিভাররা। অবশেষে ব্রেন জাগতে শুরু করে। সক্রিয় হয়ে ওঠে ফুসফুস। সুস্থ হতে শুরু করে কিডনি, লিভার, ফুসফুস। সম্প্রতি গলার ট্যাকিওস্টমি টিউব খুলে দেওয়া হয়। দেখা যায়, নিজের থেকেই শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছেন সমর। সমরের স্ত্রী অপর্ণা দাস ভর্তির পর থেকেই টানা হাসপাতালে পড়ে রয়েছেন। তিনি জানালেন, ‘‘এখন আগের থেকে অনেকটাই ভালো আছেন। খাইয়ে দিলে নিজে থেকে খাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের মতো শ্বাসপ্রশ্বাসও নিচ্ছেন। কিন্তু, সবাইকে চিনতে পারছেন না।”

    সার্জন ডা. সোহম সামন্ত জানিয়েছেন, হেমারেজিক ব্রেন স্ট্রোক। ব্রেনের বাঁদিকটা খুব খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই কারণেই স্মৃতিশক্তি অস্পষ্ট হয়েছে। তবে, নিজে থেকে খেতে পারছেন। শ্বাস নিতে পারছেন। বাকি প‌্যারামিটারও ঠিক আছে। নিয়মিত ফিজিওথেরাপি করলে আরও কিছুটা উন্নতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে স্ত্রী অপর্ণা জানালেন, “আমাদের ছ’ বছরের একটি মেয়ে আছে। উনি আমাদের একমাত্র উপার্জনশীল মানুষ। গাড়ি চালাতেন। ডাক্তারবাবুদের চেষ্টায় প্রাণে বেঁচেছেন। কিন্তু কবে উনি আবার কাজে ফিরতে পারবেন জানা নেই। কীভাবে সংসার চলবে ভেবেই আকুল হয়ে উঠছি। ওঁর ওষুধ, ফিজিওথেরাপির খরচ কীভাবে চালাব বুঝতে পারছি না।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)