ভয়াবহ! ব্যাঙ্কের বাথরুমে আত্মঘাতী হলেন ব্যবসায়ী, প্রশ্ন উঠছে একাধিক, জানাজানি হতে হুলুস্থুল
আজকাল | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: আত্মহত্যা না খুন? প্রশ্ন উঠছে বারবার। পাঞ্জাবের মোগা জেলার বাসিন্দা রাজবীর সিং-এর আত্মহত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজবীর সিং মোহালি একটি ব্যাঙ্কের ঋণ বিভাগে যান এবং পরে ওই ব্যাঙ্কেরই বাথরুমে নিজেকে গুলি করে আত্মঘাতী হন। ব্যাঙ্কের ভিতরে গুলির শব্দ শুনে কর্মীরা স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে বাথরুমে রাজবীর সিংকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য সিভিল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
খবর অনুযায়ী,আত্মহত্যার আগে রাজবীর সিং একটি ভিডিও রেকর্ড করেন। বর্তমানে তাঁর 'ডায়িং ডিক্লারেশন' হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে ভিডিওটি। ওই ভিডিওতে তিনি পাঞ্জাব পুলিশের এআইজি (অতিরিক্ত পুলিশ পরিদর্শক) এবং আরও চারজনকে আত্মহত্যার জন্য দায়ী করেন।
ভিডিওটিতে রাজবীর দাবি করেন, অভিযুক্তরা তাঁকে মানসিকভাবে হেনস্থা করছিলেন। পাশপাশি তাঁর ব্যবসা ও পারিবারিক জীবন অসহনীয় চাপ সৃষ্টি করেছিল তাঁর উপর। রাজবীর বলেন, তাঁকে জোর করে অর্থ ও ব্যবসায়িক শেয়ার দিতে বাধ্য করা হচ্ছিল। এমনকী সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ এবং ভিডিও ছড়ানো হচ্ছিল।
রাজবীর সিং একজন রিয়েল এস্টেট ও ইমিগ্রেশন ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর অফিস মোহালির ফেজ-১১ ও সেক্টর-৮২ এলাকায় অবস্থিত। তিনি ভিডিও বার্তায় উল্লেখ করেন যে, তিনি তাঁর ব্যবসায় লাভ করছিলেন, কিন্তু অভিযুক্তরা তাঁকে টার্গেট করে নানাভাবে ব্ল্যাকমেল করছিলেন। তিনি বলেন, পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও কেউ তাঁর কথা শোনেনি।
ঘটনার পরে পুলিশ ফেজ-৮ থানায় একটি এফআইআর দায়ের করে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৩০৬ (আত্মহত্যায় প্ররোচনা) এবং ১২০বি (ষড়যন্ত্র) অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়। অভিযোগপত্রে রাজবীর সিংয়ের ভিডিও বার্তাকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে যে তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে চলছে। ব্যাঙ্কে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা রিভলবারটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে। পুলিশ একই সঙ্গে ব্যাঙ্কের কর্মীদের জবানবন্দি রেকর্ড করছে। জানতে চায়ছে, রাজবীর ব্যাংকে ঠিক কী উদ্দেশ্যে এসেছিলেন এবং তাঁর আচরণে কোনওরকম অস্বাভাবিকতা ছিল কি না।
এই ঘটনার পর রাজবীর সিংয়ের পরিবার ও পরিচিতজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবার জানিয়েছে, রাজবীর একজন সৎ ও কর্মঠ ব্যবসায়ী ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই কিছু প্রভাবশালী মহলের টার্গেট হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাঁরা এই ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
প্রসঙ্গত ঘটনাটি পাঞ্জাব পুলিশের একটি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এহেন সরাসরি অভিযোগের কারণে রাজনৈতিক মহলে ও সামাজিক স্তরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এই ঘটনাকে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির একটি উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, মামলাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। দ্রুত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।