আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন অসম ও মণিপুর সফরকে কেন্দ্র করে উত্তর-পূর্বে রাজনৈতিক উত্তাপ তীব্রতর হয়েছে। একদিকে মণিপুরের জঙ্গি সংগঠনগুলির সমন্বয় কমিটি হুমকি দিয়েছে, যদি স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সরকার আলোচনা শুরু না করে তবে ১৩ সেপ্টেম্বর মোদির সফরের দিন গোটা রাজ্য অচল করে দেওয়া হবে। অন্যদিকে অসম জুড়ে আদিবাসী সম্প্রদায়গুলির বিক্ষোভ ক্রমশই বিস্তৃত হচ্ছে—যেখানে তাঁরা মোদির ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন।
অসমের দীর্ঘ প্রতিশ্রুতির প্রশ্নে বিক্ষোভ
২০১৪ সালের লোকসভা ভোট প্রচারে নরেন্দ্র মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে ছয় মাসের মধ্যে অসমের একাধিক সম্প্রদায়কে তফশিলি উপজাতি (ST) মর্যাদা দেওয়া হবে। এই সম্প্রদায়গুলির মধ্যে রয়েছে আহোম, মোরান, মাতাক, চা-শ্রমিক গোষ্ঠী, চুতিয়া ও কোচ-রাজবংশী। ২০১৯ সালের ভোটের আগেও প্রতিশ্রুতিটি পুনরাবৃত্তি করা হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে জুলাই থেকে বিভিন্ন সম্প্রদায় রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করেছে।
৩ সেপ্টেম্বর তিনসুকিয়ায় মোরান ছাত্র সংগঠনের ডাকে বিশাল সমাবেশ হয়, যেখানে প্রায় ২০ হাজার মানুষ যোগ দেন। তাঁরা ST মর্যাদার পাশাপাশি সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলের অন্তর্ভুক্তির দাবিও তোলেন। একই দিনে ধুবড়িতে কোচ-রাজবংশী ছাত্র ইউনিয়নের (AKRSU) মশাল মিছিল পুলিশের লাঠিচার্জে রক্তাক্ত হয় বহু আন্দোলনকারী। পরদিন সংগঠনটি ১২ ঘণ্টার বন্ধ ডাকে, যা সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত করে। কংগ্রেস নেতা গৌরব গোগৈ এক্স-এ লিখেছেন, “আসামের মানুষকে শোনার পরিবর্তে পুলিশ ছাত্রদের ওপর বর্বর হামলা চালিয়েছে। হিমন্ত বিশ্ব শর্মার থেকে স্বরাষ্ট্র দফতর অবিলম্বে সরিয়ে দেওয়া উচিত।”
উপজাতি সঙ্ঘের পাল্টা প্রতিবাদ
এদিকে অসম সরকারের নতুন বিজ্ঞপ্তিতে তিরাপ ট্রাইবাল বেল্টে আটটি নতুন সম্প্রদায়কে সুরক্ষিত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে কোকরাঝাড়ের অল-অসম ট্রাইবাল সঙ্ঘ জোরদার বিক্ষোভ দেখায়। তারা সরকারি নোটিশের কপি আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে জানায়, এই সিদ্ধান্ত মূল উপজাতিদের ভূমি ও অস্তিত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি।
অখিল গোগৈর বিস্ফোরক অভিযোগ
অন্যদিকে রাইজর দলে প্রধান ও শিবসাগরের বিধায়ক অখিল গোগৈ অভিযোগ করেছেন, ছয়টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের কয়েকজন নেতা বিজেপির কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে আন্দোলন স্তিমিত করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “আমিও আন্দোলনকারী, কিন্তু কিছু নেতা দিল্লি গিয়ে টাকার বিনিময়ে নীরব হয়ে পড়েছেন। এভাবে ST মর্যাদা পাওয়া সম্ভব নয়। একসাথে আন্দোলন ছাড়া দাবি আদায় করা যাবে না।”
মণিপুরের ভয়াবহ সংকট
অসমে বিক্ষোভ যেমন জোরদার হচ্ছে, তেমনই মণিপুরে মিলিট্যান্টদের হুমকি মোদির সফরকে ঘিরে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে। ২০২৩ সালের ৩ মে শুরু হওয়া জাতিগত সংঘাত এখনও জ্বলন্ত ক্ষতের মতো রয়ে গেছে। কেন্দ্রের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা ও শান্তি সংলাপ ছাড়া সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলেই দাবি করেছে সশস্ত্র সংগঠনগুলির সমন্বয় কমিটি।
সামনে অক্টোবর–নভেম্বর অধিবেশন
অসম বিধানসভা আগামী অক্টোবর–নভেম্বর অধিবেশনে তফশিলি উপজাতি মর্যাদা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আলোচনা করতে চলেছে। তার আগেই প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে উত্তর-পূর্বে উত্তেজনা ও রাজনৈতিক তরঙ্গ বাড়ছে। একদিকে মণিপুরে শান্তির আহ্বান, অন্যদিকে অসমে দশকের পুরনো প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবিতে বিক্ষোভ—উভয় ক্ষেত্রেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নীতি নিয়ে গভীর অসন্তোষ প্রতিফলিত হচ্ছে।