উত্তরাখণ্ড পর্যটন প্রকল্পে অনিয়ম, দরপত্র জমা দিয়েছিল রামদেব ঘনিষ্ঠেরই ৩ সংস্থা
বর্তমান | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
দেরাদুন: উত্তরাখণ্ডের মুসৌরিতে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম প্রকল্প দেখভালের জন্য দরপত্র চেয়েছিল রাজ্য সরকার। নিলাম প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় তিনটি সংস্থা। তার মধ্যে একটি সংস্থাকে ওই প্রকল্পের দায়িত্ব দিয়েছিল উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকার। এই পর্যন্ত সব ঠিকই আছে। কোথাও অনিয়ম নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক তদন্তে দেখা গিয়েছে, আবেদনকারীতিনটি সংস্থারই মালিকানা রয়েছে আচার্য বালকৃষ্ণের হাতে। বালকৃষ্ণের অন্য পরিচয়, তিনি বাবা রামদেবের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর। একই মালিকানার তিনটি সংস্থা নিলাম প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই হইচই শুরু হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, নিলামে অংশগ্রহণকারী সংস্থাগুলিকে ঘোষণা করতে হয়, তাদের অন্য সংস্থার সঙ্গে যোগ নেই। টেন্ডারেও স্পষ্ট উল্লেখ ছিল যে, যদি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাহলে উত্তরাখণ্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (ইউটিডিবি) চুক্তি বাতিল করে দিতে পারে। তার পরেও কীভাবে একই মালিকানার তিনটি সংস্থা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিল এবং তাদের একটিকেই দায়িত্ব দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মুসৌরির জর্জ এভারেস্ট এস্টেটে ১৪২ একর জমিতে পাঁচটি কাঠের বাড়ি, দুটি সংগ্রহশালা, একটি ক্যাফে, পার্কিং লট, হেলিপ্যাড ও একটি মানমন্দির তৈরি করে ইউটিডিবি। ওই প্রকল্প দেখভালের জন্য ২০২২ সালের ডিসেম্বরে দরপত্র আহ্বান করে উত্তরাখণ্ড সরকার। এর জন্য দরপত্র জমা দেয় প্রকৃতি অর্গানিকস ইন্ডিয়া, ভারুয়া অ্যাগ্রি সায়েন্স এবং রাজাস অ্যারোস্পোর্টস অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার্স নামে তিনটি সংস্থা। শেষ পর্যন্ত ২০২৩ সালে রাজাস অ্যারোস্পোর্টস ওই প্রকল্প দেখভালের দায়িত্ব পায়। এর জন্য বার্ষিক ১ কোটি টাকা সরকারকে দেবে তারা। প্রতি বছর এই টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। ১৫ বছরের জন্য এই দায়িত্ব পেয়েছে তারা। দেখা যাচ্ছে, প্রকৃতি অর্গানিকস ও ভারুয়া অ্যাগ্রি সায়েন্স নামে দুটি সংস্থায় বালকৃষ্ণের ৯৯ শতাংশের বেশি অংশীদারিত্ব রয়েছে। আর রাজাস অ্যারোস্পোর্টসে বালকৃষ্ণের সরাসরি অংশীদারিত্ব রয়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ। কিন্তু তাত্পর্যপূর্ণভাবে, প্রকৃতি অর্গানিকস ও ভারুয়া অ্যাগ্রি সায়েন্স সহ বালকৃষ্ণের মোট ছয়টি সংস্থার রাজাস অ্যারোস্পোর্টসে অংশীদারিত্ব রয়েছে। সব মিলিয়ে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বালকৃষ্ণ ওই সংস্থাটির প্রায় ৭০ শতাংশের অংশীদার।
যদিও এই নিয়ে বিশেষ হইচই করতে চাইছে না বিজেপি শাসিত উত্তরাখণ্ড সরকার। পর্যটন দপ্তরের অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর অমিত লোহানির দাবি, নিলাম প্রক্রিয়া সকলের জন্যই খোলা ছিল। একজনের একাধিক সংস্থার মালিকানা থাকা অস্বাভাবিক নয়। যে সংস্থা বেশি দর দিয়েছে, তাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বরং এই প্রকল্প থেকে দু’বছরে সরকার ৫ কোটি টাকা পেয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইউটিডিবির অতিরিক্ত সিইও অশ্বিনী পুন্ডিরও জানিয়েছেন, সংস্থাগুলির অতীত খুঁজে দেখা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। যে বেশি দর দেবে, তাকেই টেন্ডার দেওয়া হবে। শুধু ওই সংস্থা বৈধ কি না, সেটাই দেখা হয়েছে।