নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: খাবারের পিছনে ব্যয় ক্রমশ কমাচ্ছে ভারতবাসী। এমনকী পরিবারভিত্তিক খাদ্য ক্রয়ের হারও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে। ২০১২ সালে গ্রামীণ ভারতে একটি পরিবারের মাসিক খাদ্যপণ্য বাবদ ব্যয়ের হার ছিল ৫৩ শতাংশ। সেটা গত আর্থিক বছরে কমে গিয়ে হয়েছে ৪৭ শতাংশ। বলছে খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের সমীক্ষাই। কিন্তু কেন? স্বাস্থ্য সচেতনতা? নাকি মূল্যবৃদ্ধি? সম্ভবত দ্বিতীয়টাই কারণ। বিগত ১২ বছরে নিত্যপণ্যের পাশাপাশি প্যাকেটজাত ও প্রাত্যহিক খাদ্যদ্রব্যের দাম এতই বেড়ে গিয়েছে যে, পেটের ভাতে পর্যন্ত আপস করতে বাধ্য হচ্ছে আম জনতা। উঠে এসেছে আরও বিস্ময়কর তথ্য। শহরাঞ্চলে মানুষের আয় তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও সেখানে খাদ্যপণ্য ক্রয়ের হার গ্রামের তুলনায় বেশি কমেছে। গ্রামে গত ১২ বছরে এই হার কমেছে ৬ শতাংশ। শহরে ৭ শতাংশ। শহরাঞ্চলে ২০১২ সালে খাদ্যপণ্য ক্রয়ের গড় হার ছিল ৪৭ শতাংশ। সেটা বিগত আর্থিক বছরে হয়েছে ৪০ শতাংশ। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান বিভাগ ২০২৫ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক থেকে যে প্রবণতা দেখতে পাচ্ছে, সেখানে পর্যন্ত খাদ্যপণ্য ক্রয়ের হার একইভাবে কমে যাচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক। কারণ, ২০২২ সাল থেকে লাগাতার আকাশ ছুঁয়েছে মূল্যবৃদ্ধির হার। সরকারি পরিসংখ্যানে যদিও মূল্যবৃদ্ধির হার কমতে শুরু করেছে জুলাই মাস থেকে। আগস্টে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও জানিয়েছে, ৮ বছরের মধ্যে সবথেকে কম হারে বেড়েছে খাদ্যপণ্যের মূল্য। কিন্তু এই তথ্য ও পরিসংখ্যানের অকাট্য কোনও প্রমাণ বাজার এবং সংসার খরচে মেলেনি। তবে সরকারি পরিসংখ্যানে এটা স্পষ্ট যে, ১২ বছরে বাধ্য হয়ে খাবারে আপস করছে সাধারণ মানুষ।
এই আবহে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক স্থির করেছে, দেশের জিডিপি বৃদ্ধিহার নির্ধারণ করার যে পন্থা, সেই প্রক্রিয়ার ভিত্তিবর্ষকে এবার বদলে দেওয়া হবে। বর্তমানে বেশ কিছু বছর ধরেই জিডিপি এবং মুদ্রাস্ফীতির হার নির্ধারণের ভিত্তি ধরা হয় ২০১১-১২ অর্থবর্ষকে। এবার, ২০২৬ সালের এপ্রিল থেকে তা বদলে হয়ে যাবে ২০২২-২৩ আর্থিক বছর। পাশাপাশি খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার নির্ধারণের সামগ্রিক প্রক্রিয়াতেও আসছে পরিবর্তন। বর্তমানে ৩০০ পণ্যকে ধরা হয় মূল্যবৃদ্ধির নির্ধারণে। সেটা বাড়িয়ে করা হবে অন্তত ৪০০। আর স্বাভাবিকভাবেই কমানো হবে খাদ্যমূল্যের অনুপাত। এখন মোট মূল্যবৃদ্ধির হিসেবে মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশিই শুধু খাদ্যপণ্য। আর যেহেতু খাদ্যের দাম কমছে না, তাই এতদিন মোট মূল্যবৃদ্ধির হারও কমেনি। এবার খাদ্যপণ্যের অনুপাতকে স্থায়ীভাবে অনেকটাই কমিয়ে দেওয়া হবে। তাহলে আর খাদ্যের জন্য যখন তখন মোট মূল্যবৃদ্ধি হু হু করে বেড়ে যাবে না। কমবেশি সারা বছর তা থাকবে নিয়ন্ত্রণে। এটাই মোদি সরকারের অন্যতম লক্ষ্য।
অর্থমন্ত্রকের দীর্ঘদিনের প্রস্তাব— মূল্যবৃদ্ধির মাপকাঠি থেকে খাদ্যপণ্যকে পৃথক করে দেওয়া হোক। কারণ, ২০২২ সাল থেকে বাকি পণ্যের দামে ওঠাপড়া হলেও খাদ্যের দাম উত্তরোত্তর বেড়েছে। তার প্রভাব পড়েছে মূল্যবৃদ্ধির হারের উপর। তাতে লাগাতার অস্বস্তিতে পড়েছে সরকার। এবার তাই সরাসরি না হলেও অনেকটাই পাল্টে ফেলা হচ্ছে মূল্যবৃদ্ধি নির্ধারণের প্রক্রিয়া। মূল্যবৃদ্ধির সূচকে খাদ্যের অংশের অনুপাতই কমিয়ে দিয়ে।