প্রাচীন জয়দুর্গা বাড়ির পুজো চালিয়ে যেতে সরকারি সাহায্যের আবেদন
বর্তমান | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, কালনা: চারশো বছরের প্রাচীন কালনা শহরের জয়দুর্গা বাড়ির দুর্গাপুজো বন্ধ হতে বসেছে। ঐতিহ্য বজায় রেখে পুজো চালু রাখতে এলাকার মহিলারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো সরকারি অনুদান পেলে তবেই টিকিয়ে রাখা যাবে ঐতিহ্যবাহী জয়দুর্গা বাড়ির দুর্গাপুজো। ইতিমধ্যেই মহিলারা স্থানীয় থানা ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবেদন জমা দিয়েছেন।
প্রাচীন কালনা শহরের বালিরবাজার এলাকায় বসবাস করত চট্টোপাধ্যায় পরিবার। ভাগীরথী নদীপথে ব্যবসা বাণিজ্য করে সেই পরিবারের নাম বহু দূর অবধি ছড়িয়েছিল। প্রায় তিনশো বছর আগে মারাত্মক ক্ষতি হওয়ায় চট্টোপাধ্যায় পরিবার কালনা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। যাওয়ার আগে পরিবারের দেবী দুর্গার মঙ্গলঘট কুল পুরোহিত শহরের পাথুরিয়ামহল এলাকার বাসিন্দা রামধন মুখোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দেন। তিনি দুর্গার মঙ্গলঘট নিজের বাড়িতে স্থাপন করেন। রামধনবাবুর কন্যা সন্তান ছিল না। তাই তিনি দুর্গা প্রতিমার পাশে গণেশ, কার্তিককে বাদ দিয়ে শুধু লক্ষ্মী ও সরস্বতীকে রেখে পুজো শুরু করেন। দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী ও সরস্বতী পরিবারে কন্যাসম হওয়ায় বিসর্জন প্রথা নেই। নিত্যপুজোর মধ্যে দিয়ে স্থায়ী মন্দিরে দেবী বারোমাস পূজিত হন। এই দেবীই জয়দুর্গা নামে পরিচিত। দেবী এতটাই জাগ্রত যে প্রাচীনকাল থেকেই মহিষমর্দিনী পুজো কমিটি থেকে আসে মায়ের পুজো, কলাবউয়ের শাড়ি। একসময়ে বর্ধমান রাজপরিবারের আর্থিক সহায়তাও আসত। পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যরাই দুর্গাপুজো করে আসছিলেন। সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে আর্থিক সমস্যায় দুর্গাপুজো চালিয়ে যাওয়া কঠিন হচ্ছিল। এবার তাই পরিবারের সদস্যরা পুজো না করার সিদ্ধান্ত জানান এলাকার বাসিন্দাদের। মহিলারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পুজো করতে উদ্যোগী হন। প্রাচীন পুজোকে বাঁচাতে গঠন করেন পাথুরিয়ামহল জয়দুর্গা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। কমিটি মুখ্যমন্ত্রী থেকে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সকলের কাছে সরকারি অনুদানের আবেদন রেখেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সুনীল চৌধুরী বলেন, চারশো বছরের প্রাচীন জয়দুর্গা বাড়ির পুজো চালিয়ে যাওয়া নিয়ে আর্থিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। এলাকার মহিলারা এই ঐতিহ্যবাহী পুজো টিকিয়ে রাখতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করেছেন। স্থানীয় বধূ মৌমিতা ঘোষ, রমা রুদ্ররা বলেন, জয়দুর্গা বাড়ির দুর্গাপুজো কালনার প্রাচীন ঐতিহ্য। অর্থের অভাবে তা বন্ধ হোক, আমারা চাই না। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন পাঠিয়েছি।
জয়দুর্গা বাড়ির সদস্য অমিতকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, এক সময়ে বর্ধমান রাজ পরিবার থেকে সাহায্য আসত। পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যরাই পুজো চালিয়ে আসছিলেন। দু’-এক বছর ধরে পরিবারের পক্ষে পুজো চালিয়ে যাওয়া আর্থিক দিক দিয়ে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সর্বজনীন ভাবে পুজো চালতে আমাদের পরিবারের কোনও আপত্তি নেই। আমরা চাই টিকে থাকুক জয়দুর্গা বাড়ির প্রাচীন পুজো। -নিজস্ব চিত্র