একজন মহিলা, বোল তুলছেন তিনটি ঢাকে! ইন্দাসের নারীশক্তির কেরামতি এবার নৈহাটির পুজোয়
বর্তমান | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা,বিষ্ণুপুর: একটা ঢাকেই বোধনের বোল তুলতে হিমশিম খান পুরুষ ঢাকিরা। সেখানে এক মহিলা কিনা একসঙ্গে তিনটি ঢাকে বোল তুলছেন! আবার কখনও দু’জন ঢাকির কাঁধে চড়ে দিব্যি বাজিয়ে যাচ্ছেন ঢাকের বাদ্যি! ঢাক নিয়ে এমন নানা কেরামতি দেখাতে তৈরি ইন্দাসের সাহসপুর গ্রামের দাসপাড়ার মহিলারা। এবার পুজোয় তাঁদের ডাক পড়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নৈহাটিতে। দলে রয়েছেন ১০ জন। রোজ নিয়ম করে মহড়া দিচ্ছেন লতা, অসীমা,অনিমারা।
বছর কয়েক আগে গ্রামের পুজোয় বাইরের মহিলা ঢাকির দল এসেছিল ঢাক বাজাতে। তাদের দেখেই গ্রামের মহিলাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়। ঠিক করেন, কয়েকজন মিলে ওইরকম একটি দল তৈরি করবেন। চলে আলাপ আলোচনা। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তৈরি হয় দল। শুরু হয় ঢাক বাজানোর প্রশিক্ষণ। প্রথম দিকে তাঁদের দিকে ধেয়ে আসে নানা বিদ্রুপ মন্তব্য। আড়ালে-আবডালে অনেকেই বলতে থাকেন, মহিলারা নাকি ঢাক বাজাবেন! তবে, গ্রামেরই কিছু পুরুষ ঢাকি তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে পড়েন। সহযোগিতার হাত বাড়িতে দেন। শুরু হয় অনুশীলন। কিছুদিনের মধ্যেই ঢাক বাজানোর সমস্ত কৌশল রপ্ত করে নেন লতা-অসীমারা। গ্রামের পুজোয় একযোগে ১০মহিলা পেশাদারি ভঙ্গিতে ঢাক বাজিয়ে তাক লাগিয়ে দেন। ধীরে ধীরে পার্শ্ববর্তী গ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁদের ডাক পড়ে। এবারের পুজোয় ইন্দাস থেকে ১৫০কিলোমিটার দূরে নৈহাটির একটি পুজো কমিটির পক্ষ থেকে ঢাক বাজানোর ডাক এসেছে। লতা-অসীমারা বলছিলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে সংসারের কাজকর্ম করতে হয়। অন্যের জমিতে দিনমজুরিও খাটতে যেতে হয়। তারপরেও সময় বের করে মহড়া দেওয়ার কাজ চলছে। দুর্গাপুজো ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময়েও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাইরে থেকে বায়না আসে। তবে, দুর্গাপুজোয় আলাদা আনন্দ পাই। চারদিন ধরে মণ্ডপে ঢাক বাজাই। প্রচুর দর্শনার্থী আমাদের ঢাক বাজানো দেখেন।’
এবার সুদূর নৈহাটিতে ডাক পেয়ে বেজায় খুশি সাহসপুরের মহিলা ঢাকিরা। কী পরে যাবেন, ঢাক নিয়ে কি কি কেরামতি দেখানো যাবে, তার অনুশীলনে কোনও খামতি রাখতে চাইছেন না কেউই। অনিমাদের কথায়, ‘আমরা প্রত্যেকেই একই রঙের শাড়ি পরে ঢাক বাজাই। মানুষকে আনন্দ দিতে ঢাক বাজানোর নানা কৌশল রপ্ত করছি। এক একজন একাধিক ঢাক বাজাতে পারদর্শী। দু’টি ঢাকের উপর দাঁড়িয়ে একসঙ্গে তিনখানা ঢাক বাজানো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তা হলেও নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে আমরা সেই কৌশল রপ্ত করে ফেলেছি। একটা সময় অনেকেই ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করলেও এখন গ্রামের সকলেই আমাদেরসহযোগিতা করেন।’