সংবাদদাতা, রামপুরহাট: নলহাটির পাথর শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিল শুক্রবারের দুর্ঘটনা। এদিন বাহাদুরপুর ও ভোলা গ্রামের মাঝে একটি অবৈধ পাথর খাদানে ভয়াবহ ধস নামে। অকালে ঝরে যায় ৬টি তাজা প্রাণ। মৃতদের পরিবারের তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, মালিকরা শুধু মুনাফার স্বার্থ দেখেন। শ্রমিকদের সুরক্ষা নিয়ে তাঁরা উদাসীন। তা ছাড়া পাথর শিল্পাঞ্চলে একের পর অবৈধ খাদান গড়ে উঠলেও সেদিকে পুলিস ও প্রশাসনের নজর নেই বলে অভিযোগ তাঁদের। সেই কারণেই বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। এই নিয়ে গত এক বছরে একাধিক দুর্ঘটনায় মোট ১৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। জখন হয়েছেন ১৫ জনেরও বেশি।
এদিনের ঘটনায় জখম তপন মালের জামাইবাবু তথা সিপিএমের কৃষকসভার রাজ্য কাউন্সিলের সদস্য চন্দ্রকান্ত মাল বলেন, ‘খাদানে ধস নেমে এই ঘটনা ঘটেছে। আরও কয়েকজন পাথরে চাপা পড়ে থাকতে পারে। শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের কোনও সুরক্ষা নেই। মালিকরা শুধু টাকা কামাতেই ব্যস্ত।’ এই একই অভিযোগ শোনা গিয়েছে অন্যান্য মৃত শ্রমিকদের পরিজনদের মুখ থেকেও।
গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি নলহাটির নশিপুরে খাদানে কাজ করার সময় নিচে পড়ে মৃত্যু হয় দুই শ্রমিকের। ওই বছরের ৭ মার্চ নলহাটির বাহাদুরপুরে খাদানে মৃত্যু হয় দুই শ্রমিকের। গত বছরের ৮ এপ্রিল এই শিল্পাঞ্চলে আরও এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ওই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর নলহাটির বাহাদুরপুরে খাদানের ধস নেমে নিচে পড়ে মৃত্যু হয় পাঁচ শ্রমিকের। এছাড়া প্রায়শই খাদানে ধস নামে। শ্রমিকরা মারা যান। হুঁশ থাকে না মালিকদের। আবারও যথারীতি অবৈধ পাথর খাদানগুলি চলতে থাকে স্বাভাবিক নিয়মে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন যে খাদানে এই ঘটনা ঘটেছে সেটি অবৈধভাবে চালিয়ে আসছে বাহাদুরপুর গ্রামের এক ব্যবসায়ী। যদিও ওই ববসায়ীকে ফোন করা হলেও কল রিসিভ করেননি। শুধু তিনি নন, এলাকার বহু খাদান একপ্রকার গায়ের জোরে চালাচ্ছেন পাথর মাফিয়ারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নুন্যতম সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই শ্রমিকদের কাজ করতে হয়। যার জেরে দুঘর্টনায় শ্রমিক মৃত্যুর মিছিল লেগেই রয়েছে। আর মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীরা। এটাই যেন এখানে রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসন সব জেনেও পাথরের গাড়ি পিছু মোটা অঙ্কের রয়্যালটি নিয়ে সেগুলি বৈধ করে দিচ্ছে। যদিও জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, যারা অবৈধভাবে খাদান চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে এদিনের ঘটনার পাশাপাশি বিডিওকে শিল্পাঞ্চল ঘুরে একটি রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ২০১৭ সালে বীরভূম জেলার ২১৭ টি খাদানের মধ্যে ২১১ টি পরিবেশ আদালত অবৈধ ঘোষনা করে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। খাতায় কলমে সেগুলি বন্ধ থাকলেও রমরমিয়ে চলছে। • নিজস্ব চিত্র