‘পুরসভায় পর্নোগ্রাফি চক্র, ব্যবস্থা নেওয়া হবে’, ১৫ বার হুমকি মেইল দুষ্কৃতীদের
বর্তমান | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সৌম্যজিৎ সাহা দক্ষিণ ২৪ পরগনা
‘আপনার পুরসভায় চাইল্ড পর্নোগ্রাফির চক্র চলছে। অবিলম্বে পদক্ষেপ করুন। না হলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ দিল্লি পুলিশের নাম করে এমনই হুমকি ই-মেইল এসেছে রাজপুর সোনারপুর পুরসভায়! আর এই ঘটনা সামনে আসার পরই প্রশ্ন উঠেছে, সাধারণ মানুষের পর কি এবার খোদ প্রশাসনকেই টার্গেট করছে প্রতারণা চক্র? এই ধরনের গুরুতর অভিযোগ তুলে ভয় পাইয়ে দিয়ে প্রতারণার চেষ্টা চলছে বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। বিষয়টি হাল্কাভাবে নিতে চাইছেন না পুরকর্তারাও। থানায় এনিয়ে অভিযোগ জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
পুরসভা সূত্রে খবর, গত কয়েক মাসে প্রায় ১৫ বার এই ধরনের বয়ানে ই-মেইল এসেছে পুরসভার কাছে। প্রত্যেকবার পৃথক মেইল আইডি ব্যবহার করা হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, তাতে কোনও নাম, ঠিকানা বা পুর-এলাকার কোথায় এই কাণ্ড চলছে—এসব কোনও তথ্য নেই। দিল্লি পুলিশের একটি জাল লেটারহেড বানিয়ে সেখানে চাইল্ড পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত কয়েক লাইন লিখে সেটাই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক ঝলক দেখে মনে হবে যে সেটি আসল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, চাইল্ড পর্নোগ্রাফির মতো অপরাধের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে কেন পুরসভাকে বলা হচ্ছে? এমন কোনও অপরাধ ঘটে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তো পুলিশকে বলার কথা। এখান থেকেই অনেকটা স্পষ্ট, যারা এই কাজ করেছে, তারা আসলে প্রতারণার কোনও বড়সড় ছক কষছে। জানা গিয়েছে, প্রথম প্রথম এরকম মেইল আসার পর অবাক হয়েছিল পুর কর্তৃপক্ষ। তারা বেশ কিছু প্রশ্ন জানতে চেয়ে পাল্টা মেইলও করেছিল। কিন্তু কোনও জবাব আসেনি। কিন্তু মাঝেমধ্যেই সেই একই প্রসঙ্গ তুলে হুমকি মেইল আসতে থাকছে। মাঝে ক’দিন বন্ধ ছিল। ফের দিন কয়েক আগে একই মেইল এসেছে। তাই এবার এর একটা বিহিত করতে চাইছে পুরসভা। কারা এর পিছনে রয়েছে, তাদের টেনে বের করতে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান পল্লব দাস।
সাধারণত দেখা যায়, এই কায়দায় মানুষকে ভয় পাইয়ে দিয়ে তাদের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করছে বিভিন্ন প্রতারক গোষ্ঠী। ‘ডিজিটাল অ্যারেস্টের’ শিকার হয়ে অনেক প্রবীণ বাসিন্দা সর্বস্ব খুইয়েছেন। এক্ষেত্রেও সেরকম কিছু প্রশাসনের বিরুদ্ধে করার পরিকল্পনা চলছে বলে অভিমত ওয়াকিবহাল মহলের। রাজপুর সোনারপুর পুরসভায় কবে কবে এই মেইল এসেছে, প্রথমে কী তার উত্তর দেওয়া হয়েছিল—সব বের করা হচ্ছে। পুলিসের কাছে অভিযোগের সঙ্গেই এ সংক্রান্ত যাবতীয় নথি ও তথ্যপ্রমাণ তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুর কর্তৃপক্ষ।