• অবাধ নেশা আর অপ্রতুল নজরদারি! দুই রোগে জর্জরিত কুলীন ‘যদু বংশ’
    বর্তমান | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মাঝে কেটেছে দু’টি বছর। আবার বিতর্কে দেশের সেরা ‘স্টেট পাবলিক ইউনিভার্সিটি’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সেই একই প্রশ্নে বিদ্ধ শিক্ষাঙ্গনের যদু বংশ। নেশা ও সিসি ক্যামেরা। বৃহস্পতিবার রাতে ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া অনামিকা মণ্ডল ক্যাম্পাসের ভিতরেই পুকুরে ডুবে মারা যান। তারপরেই নতুন করে জেগে উঠেছে এই বিতর্ক। তদন্তে দেখা গিয়েছে, ইউনিয়ন রুমের পাশে পুকুর পাড়ের রাস্তায় নেই সিসি ক্যামেরা। সম্বল পুকুরের অদুরে থাকা তিনটি ক্যামেরা। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর এক গভীর সমস্যা হল ‘নেশা’। পুলিশের দাবি, ছাত্রীর ময়নাতদন্তে মদ্যপানের ইঙ্গিত রয়েছে। শুক্রবার মৃত পড়ুয়ার প্রতিবেশী নিমতার বাসিন্দা যাদবপুরের প্রাক্তনী প্রদীপ সরকার বলছিলেন, ‘যা ঘটছে খুবই আতঙ্ক লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন পদক্ষেপ না নিলে ছেলে-মেয়েকে যাদবপুরে ভর্তি করার আগে ২০ বার ভাববে। আমাদের সেই যাদবপুর আর নেই।’

    নেশা আর যাদবপুর কীভাবে মিশে গিয়েছে? মদের ভাঙা বোতল তো দেখাই যায়। এদিন দেখা গেল, ৪ নম্বর গেটের পার্কিংয়ের দেওয়ালে লেখা, ‘লেটস ড্রিঙ্ক অ্যান্ড পার্টি’। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ বলছেন, ক্যাম্পাসে উত্সব হলেই আতঙ্ক শুরু হয়। এর আগে ২০২২ সালেও দোলের দিন এক প্রাক্তনী পুকুরে ডুবে মারা গিয়েছিলেন। রাত পর্যন্ত ড্রামা ক্লাবের একটি অনুষ্ঠান চলছিল পার্কিংয়ে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী পুলিশের দাবি, অনামিকার পাকস্থলীতে মদের গন্ধ মিলেছে। পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, অনামিকা যে পুকুরে পড়ে গিয়েছেন, অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকায় তা কেউ বুঝতেও পারেনি। সেখান থেকে একটু এগিয়ে এসএফআইয়ের অবস্থান চলছিল। এক পড়ুয়াই এসে অনামিকাকে উদ্ধার করেন। নেশার পর আসে সিসি ক্যামেরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়ালে একটি পোস্টারে লেখা, ‘সিসিটিভিতে ৬৮ লাখ, পরিকাঠামো শুকিয়ে কাঠ’। এর নীচে লেখা, নজরদারি ও নিরাপত্তা সমান নয়। লাল পতাকার ঘাঁটি যাদবপুরের সিসি ক্যামেরায় অনিহা রয়েছে, এমনই কথা ভাসে। এনিয়ে সুর চড়িয়েছে তৃণমূল ও এবিভিপি। এদিন তারা মিছিলের সঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ডেপুটেশনও জমা দিয়েছে। এসএফআই রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। ক্যাম্পাসে নেশা বিরোধী মনোভাব প্রচার করতে হবে। পুকুরে ফেনসিং বসাতে হবে। সিসি ক্যামেরার জন্য তো ৬৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু ক্যামেরা বসানো হয়নি। কেন?’ অতিবাম ছাত্র সংগঠনের নেতা ইন্দ্রানুজ রায় বলেন, ‘কিছু সংগঠন নেশার লোভ দেখিয়ে পড়ুয়াদের আকর্ষণ করে। হাজার ক্যামেরা বসালেও মিটবে না সমস্যা। যারা নেশা করছে, অভিযান চালিয়ে তাদের ধরতে হবে। কঠোর শাস্তি দিতে হবে।’ এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অমিতাভ দত্ত পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মীর অভাব মেনে নিয়ে বলেন, ‘সিসি ক্যামেরা বেশ কিছু বসানো হয়েছে। আরও বসানো হবে। নিরাপত্তা রক্ষী নিশ্চয়ই ঘটনার সময় ছিল না। অনুষ্ঠানটিও রাত পর্যন্ত চলার কথা ছিল না। ঘটনাটিও সেই সময় ঘটেছে কি না, জানি না।’

    এদিকে, ড্রামা ক্লাবের শেষ দিনের অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। ইংরেজি বিভাগের প্রধান শাশ্বতী হালদারের ঘরও এদিন বন্ধ ছিল। এসএফআইয়ের কর্মসূচিও বাতিল হয়েছে। অনামিকার বিশেষ বন্ধু অত্রি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমাকে এই নরক থেকে নিয়ে যেতে পারতিস মিষ্টু (অনামিকার ডাক নাম)।’ প্রাক্তনীরাও স্তম্ভিত। তাঁদের প্রশ্ন, আর কত? কত মৃত্যু দেখতে হবে?  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)