‘শ্যালো ড্রাউনিংয়ে’ মৃত্যু যাদবপুরের ছাত্রীর প্রাথমিক তদন্তের পরে মনে করছে পুলিশ
বর্তমান | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অনামিকা মণ্ডলের মৃত্যুর ক্ষেত্রে ‘শ্যালো ড্রাউনিং’-এর ঘটনা ঘটেছে বলেই মনে করছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। সাধারণত নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অগভীর জলে মুখ থুবড়ে পড়লে এরকম মৃত্যু সম্ভব। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে বলে তাঁদের প্রাথমিক অনুমান। শুক্রবার কাটাপুকুর মর্গে ময়নাতদন্তের পরে প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়ে তাঁদের এই ধারণা আরও জোরালো হয়েছে।
কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ডুবেই মৃত্যু হয়েছে ওই ছাত্রীর। শরীরে বড় কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে, পড়ে গেলে যে কেটেছড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে, তেমন কিছু চিহ্ন মিলেছে। পাকস্থলিতে অ্যালকোহলের গন্ধযুক্ত তরল মিলেছে যা মদের দিকেই ইঙ্গিত করছে। বিতর্ক এড়াতে, ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়ায় ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে। আসলে ওই ছাত্রী কী কী খেয়েছিলেন, তা জানতে ভিসেরা পরীক্ষাও করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে, সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে মৃতার সঙ্গীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বয়ান রেকর্ডের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁর মৃগী জাতীয় কোনও অসুখের ইতিহাস ছিল কি না, এসব সম্ভাবনা খোলা রেখেও তদন্তে এগচ্ছে পুলিশ।
পুলিশের তথ্যের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াও মিলে যাচ্ছে। চার নম্বর গেটের কাছে পুকুরটি চার নম্বর ঝিল বলেই পরিচিত। তবে, সেটি অগভীর। সেখানে কীভাবে ডুবে কেউ মারা যেতে পারে, সেই প্রশ্নও উঠছিল। তবে, জলাশয়টি সম্প্রতি গভীর করা হয়েছিল বলে খবর। টানা বৃষ্টির জল জমে সেটি ফুলেফেঁপেও রয়েছে। পানা জাতীয় জলজ উদ্ভিদে ভরা সেটি। অসংলগ্ন অবস্থায় কেউ পড়ে গেলে, সেগুলি নাকেমুখে ঢুকেও শ্বাস বন্ধ করতে পারে।
এদিকে এলাকা সূত্রে খবর, দুর্গাপুজোয় মেতে ওঠার প্রস্তুতিও সারা হয়ে গিয়েছিল অনামিকার। নতুন শাড়ি কিনে পাশের ফ্ল্যাটের কাকিমা ইতি রায়ের কাছে ফলস পাড় বসানোর জন্য দিয়েও রেখেছিলেন। তাঁর মৃত্যু মানতেই পারছেন না ইতিদেবী সহ অন্য প্রতিবেশীরা। নিমতা মাঝেরহাটি ললিত গুপ্ত স্ট্রিটের রায়পাড়ার বাসিন্দা অনামিকা। বাবা অর্ণব মণ্ডল বেসরকারি সংস্থার কর্মী। আর মা মীনাক্ষী মণ্ডল তাঁদের দোতলা বাড়ির নীচে স্টেশনারি দোকান চালান। সেখানে মাঝে মাঝে অনামিকাও বসতেন। শুক্রবার যাদবপুর থানায় ঢোকার আগে অর্ণববাবু বলেন, ‘পুলিশে কোনও অভিযোগ জানাচ্ছি না। পুলিশই নিজের মতো তদন্ত করবে।’
ঘটনাচক্রে এদিনই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশিত টাস্ক ফোর্সের প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। তাঁরা মানসিক স্বাস্থ্য, আত্মহত্যা প্রবণতা নিয়ে সচেতনতা প্রসার এবং মতামত গ্রহণের কাজ করেন। ৬০ জন পড়ুয়ার সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন। কথা হয় ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অমিতাভ দত্ত এবং অন্যান্য অধ্যাপকদের সঙ্গেও। পড়ুয়ারা নিরাপত্তার অভাব, বিভিন্ন বিভাগে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে ধরেন। ছাত্রীমৃত্যু নিয়েও তাঁরা খোঁজখবর নেন। যদিও, টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান আরমান আলি বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েই পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলছি। তাঁরা কী কী সমস্যায় পড়ছেন, তা নিয়ে কথা বলছি। এর ভিত্তিতে রিপোর্ট তৈরি করা হবে। তবে, যাদবপুরের এই ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানি না। এভাবে মৃত্যু খুবই দুঃখজনক।’
বৃহস্পতিবার রাতে ক্যাম্পাসে এই ঘটনার পরে শুক্রবার সকাল থেকেই পাশের আর্টস ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের অফিস তালাবন্ধ ছিল। অনুষ্ঠানের জিনিসপত্র বের করতে কয়েকবার খোলা হয়। নিরাপত্তারক্ষী থেকে শুরু করে এসএফআই প্রভাবিত আর্টস ফ্যাকাল্টির পড়ুয়ারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। প্রসঙ্গত, ড্রামা ক্লাবের অনুষ্ঠান চলাকালীন এই ঘটনা ঘটে। এটিতে সমস্ত বিভাগের পড়ুয়ারা থাকলেও তাতে মূলত কলা, বিশেষভাবে ইংরেজি বিভাগের পড়ুয়াদের প্রভাব বেশি। অলিখিতভাবে এটি এসএফআইয়ের উদ্যোগ বলেই পরিচিত।