অবৈধ নির্মাণ কারবারের দখল ঘিরেই গুলশন কলোনিতে চলল বোমা-গুলি
বর্তমান | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বেআইনি নির্মাণের দখল কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর রেষারেষি থেকেই আনন্দপুরে গুলি-বোমা চলেছে। মূল অভিযুক্ত মিনি ফিরোজ তার দলবলকে নিয়ে হামলা চালিয়েছে। ঘটনার তদন্তে নেমে এই তথ্য হাতে এসেছে লালবাজারের। ফিরোজ বা তার দলবলের সক্রিয়তা নিয়ে থানা কেন খোঁজখবর করেনি, তাই নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু করেছে লালবাজার। তবে প্রকাশ্যে এভাবে অস্ত্র নিয়ে গুন্ডামির ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ শীর্ষ কর্তারা। এই ঘটনায় এন্টালি ও নারকেলডাঙা এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে একটি ওয়ান শর্টার ও একটি সেভেন এমএম পিস্তল।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আনন্দপুরের গুলশন কলোনি। তিনটি বাইকে চাপিয়ে শাগরেদদের নিয়ে এসে মিনি ফিরোজ এলাকায় তাণ্ডব শুরু করে। স্থানীয়রা পুলিসকে জানিয়েছেন, সেভেন এমএম পিস্তল ও দেশি বন্দুক থেকে গুলি ছোঁড়া হয়। ভাঙচুর করা হয় তিনটি বাইক। একটি বিরিয়ানির দোকানেও হামলার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ মিনি ফিরোজ ও তার সঙ্গীরা ভোজালি দিয়ে খুরশিদ আলম নামে একজনকে আঘাত করে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তদন্তে উঠে এসেছে, একসময় এলাকা দাপানো মিনি ফিরোজের বিরুদ্ধে, জমির সিন্ডিকেট, তোলাবাজি, হুকিং করে বিদ্যুতের অবৈধ কারবার চালানো এবং অস্ত্র ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। বিহারের বেআইনি অস্ত্রের কারবারিরা তার কাছে এসে আশ্রয় নিত। ফিরোজের বাড়ি ছিল বেআইনি অস্ত্রের ভাণ্ডার। ২০২৩’এর শেষের দিকে আগ্নেয়াস্ত্র সহ সে ধরা পড়ে। জেলে থাকার সময়ই গুলশন কলোনির দখল হাতছাড়া হয়। ততক্ষণে শাসক দলের অন্য এক গোষ্ঠী এলাকার দখল নেয়। অভিযোগ, নতুন করে এলাকায় যথেচ্ছ অবৈধ নির্মাণ শুরু হয়। এই গোষ্ঠীর এক স্থানীয় ‘মাথা’ গুলশন কলোনিতে সক্রিয় হয়ে ওঠার পর ২০২৪ থেকে ২০২৫ মাঝামাঝি পর্যন্ত ফিরোজ এলাকায় ঢুকতে পারেনি। যা নিয়ে ফিরোজের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। যারা কারণে এলাকা থেকে ব্রাত্য ছিল ফিরোজ, সে আবার সম্পর্কে তার ভাই। সম্পর্ক ভালো রাখতে সক্রিয় ওই ‘মাথা’র প্রতি স্কোয়ার ফিট অবৈধ নির্মাণে ২৫ টাকা করে ‘কমিশন’ দিচ্ছিল ফিরোজকে। সম্প্রতি তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। টাকার ভাগ না পেয়ে ফিরোজ পরিকল্পনা করে, শাগরেদদের নিয়ে এলাকায় তার পুরনো ‘প্রতাপ’ দেখানোর। তবে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া ফিরোজ যে নতুন করে গুলশন কলোনিতে ‘পায়ের নীচের মাটি শক্ত করছে’, সে খবর পুলিসের কাছে ছিল না।
তদন্তে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে সক্রিয় ওই নেতার অনুগামীরা ফিরোজের এক শাগরেদকে মারধর করে। তার বদলা নিতেই ফিরোজ তার দলবল নিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চড়াও হয় এলাকায়। তাদের মারে আহত হয় একজন। তবে অবৈধ নির্মাণ নিয়ে গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে উদ্বিগ্ন আধিকারিকরা। ফিরোজ ও তার সহযোগীদের খোঁজে চলছে তল্লাশি।