নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: পকেটে চাকু নিয়ে ঘুরছিল বরানগরের বাসিন্দা একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া রানা সিং। সেই চাকু দিয়েই দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশনে সহপাঠী মনোজিৎ যাদবকে (১৮) সে খুন করে বলে অভিযোগ। এই ঘটনা শহরের অন্যতম লাইফ লাইন মেট্রোর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। পাশাপাশি, রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন দক্ষিণেশ্বর থানার আধিকারিকরা। তাঁরা জানতে পেরেছেন, মনোজিতের সঙ্গে রানার পুরনো শত্রুতা ছিল। পাশাপাশি, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ত্রিকোণ প্রেমও রয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, এদিন খৈনি নিয়ে বচসা আসলে ছুতো! ত্রিকোণ প্রেম সংক্রান্ত বিষয়ে মনোজিতের সঙ্গে রানার পুরনো শত্রুতা ছিল। সেকারণেই এই হত্যাকাণ্ড। এব্যাপারে বিস্তারিত জানতে মনোজিতের দুই সহপাঠীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, আজ শনিবার রানাকে বারাকপুর আদালতে তোলা হবে। তাকে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাবে পুলিশ।
এদিন জেরায় রানা জানিয়েছে, তার এক বন্ধু ও মনোজিৎ একই তরুণীকে পছন্দ করত। এই নিয়ে এর আগেও মনোজিতের সঙ্গে তার ঝামেলা হয়েছে। বন্ধুর প্রেমিকাকে কটুক্তি করা নিয়ে গত পাঁচ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসে রানা ও মনোজিতের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারিও হয়। দু’দিন আগে দুই পক্ষের মধ্যে সাময়িক মিটমাটও হয়েছিল। এদিন স্কুল থেকে বেরনোর পরই খৈনি খাওয়া নিয়ে ফের বচসা শুরু হয় তাদের মধ্যে। রানার দাবি, খৈনি খাবে কি না, তা সহপাঠীর কাছে জানতে চেয়েছিল। উত্তরে মনোজিৎ অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে। এনিয়ে শ্যামবাজার মেট্রো স্টেশনে ঝামেলা হয়। কয়েকজন মধ্যস্থতা করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু, দক্ষিণেশ্বর স্টেশনে নামতেই এই ইস্যুতে ফের ঝামেলা বাঁধে। পকেটে থাকা চাকু বের করে মনোজিতকে কোপায়। চাকুর এক কোপ মনোজিতের হৃদপিণ্ড ভেদ করে ঢুকে যায়। কিন্তু, কী কারণে ওই চাকু রেখেছিল রানা? জেরায় সে জানিয়েছে, আত্মরক্ষার জন্য ওই হাতিয়ার সঙ্গে রাখত। তার দাবি, খুন করার জন্য হামলা চালায়নি। পুলিশ রহস্য উদ্ধারে ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
খুন হওয়া মনোজিৎ বাগবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিল। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল বরানগরের স্থানীয় স্কুল থেকে। এলাকারই বাসিন্দা ওই সহপাঠীর সঙ্গে যে অনেক পুরনো বন্ধুত্ব, এমনটা নয়। তারপরেও কী কারণে অশান্তি ও খুনের ঘটনা, সেটাই তদন্তকারীদের বড় প্রশ্ন। তবে তদন্তকারীরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত, ওই পড়ুয়া বাড়ি থেকে ছুরি নিয়ে স্কুলে গিয়েছিল। ছুরি নিয়ে মেট্রোতেও চেপেছিল। মেট্রো থেকে বেরিয়েই সহপাঠীর উপর প্রাণঘাতী হামলা চালিয়ে চম্পট দেয়। এমনকী, বিকেল থেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সেও বাড়ি ছাড়া। ফলে আগাম পরিকল্পনা করেই খুন বলে তদন্তকারীদের অনুমান। মৃতের ভাই রণজিৎ যাদব সহ প্রতিবেশীরা বলেন, পড়াশুনা নিয়েই থাকত মনোজিৎ। কয়েক মাস আগেই বাগবাজারের স্কুলে সে ভর্তি হয়েছিল। কোনও জটিলতায় সে যুক্ত হতে পারে, আমরা কেউ বিশ্বাস করি না। ওই পড়ুয়া কেন খুন করল সেটাই বড় প্রশ্ন! তবে এদিনের হাড়হিম করা খুনের ঘটনায় মেট্রোর সাধারণ যাত্রীরা হতবাক। বালির প্রত্যক্ষদর্শী রুমা দত্ত বলেন, স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময় আচমকা চিৎকার চেঁচামেচি শুনি। দেখি রক্তে মাখামাখি হয়ে আর্ত চিৎকার করছে এক স্কুল পড়ুয়া। দুই কমবয়সী তাকে পাঁজাকোলা করে নামাচ্ছে। অথচ, দুই আরপিএফ জওয়ান অদূরে ঠায় দাঁড়িয়ে। শুনলাম সবার সামনে দিয়ে স্টেশনের দোতলা থেকে একতলায় নেমে ঘাতক চম্পট দিয়েছে। সারা স্টেশন রক্তে মাখামাখি। প্রতিদিন এই রুটে যাতায়াত করি। আজকের দৃশ্য দেখে চরম আতঙ্কে আছি।-নিজস্ব চিত্র