‘এই হচ্ছে শয়তান, কালপ্রিট’, আদালতের বাইরে সিবিআই আধিকারিককে আক্রমণ ‘অভয়া’র মা-র
প্রতিদিন | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিক সীমা পাহুজাকে ‘শয়তান’, ‘কালপ্রিট’ বলে আক্রমণ ‘অভয়া’র মা-র। শুক্রবার শিয়ালদহ আদালতের বাইরে সীমা ও তদন্ত সংস্থার আইনজীবীদের উদ্দেশে রীতিমতো অভব্য আচরণের অভিযোগ উঠেছে আর জি কর কাণ্ডে নির্যাতিতার মায়ের বিরুদ্ধে। যদিও পাল্টা কোনও মন্তব্য করেননি সীমা, অন্যান্য অফিসার বা সিবিআইয়ের আইনজীবীরা।
শুক্রবার আদালতে আর জি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ, খুন মামলায় ষষ্ঠ স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দেয় সিবিআই। আদালত চত্বরে উপস্থিত ছিলেন নির্যাতিতার মা ও বাবা। শুনানির শেষে সিবিআইয়ের আইনজীবীদের সঙ্গে আদালতের বাইরে একটি দোকানের সামনে কথা বলছিলেন সীমা ও অন্য আধিকারিকরা। তখনই আদালত চত্বর থেকে বেরিয়ে তাঁদের দেখে হঠাৎ নির্যাতিতার মা ‘মারমুখী’ হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ। প্রত্যক্ষদর্শীদের সামনেই সীমার দিকে আঙুল তুলে ‘অভয়া’র মা বলে ওঠেন, ‘‘এই হচ্ছে শয়তান, এই হচ্ছে মেন কালপ্রিট।’’ এরপর অন্য আধিকারিক ও আইনজীবীদের লক্ষ্য করে তিনি বলতে থাকেন, ‘‘আপনারা সরকারের মাইনে নেন। আপনাদের চাকরি খেয়ে নেওয়া উচিৎ। আপনারা আদালতে ঢুকতে দেননি। আপনারাই নারাজি পিটিশন দিতে দেননি।’’ যদিও এত কিছু শুনেও সিবিআইয়ের আধিকারিক ও আইনজীবীরা নীরব থাকেন। ‘অভয়া’র মা ও বাবাকে সরিয়ে নিয়ে যান তাঁদের আইনজীবী ও আদালতে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা।
আর জি কর কাণ্ডের একদিনের মধ্যে একমাত্র অভিযুক্ত সঞ্জয় রাইকে কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তারপরও সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলেন নির্যাতিতার মা ও বাবা। সিবিআই ঘটনার সাড়ে পাঁচ মাসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করে। দোষী সঞ্জয় এখন যাবজ্জীবন তথা আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত। এরপরও সিবিআই তদন্ত বজায় রেখেছে। তারপরও নির্যাতিতার মায়ের এহেন আচরণে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
এদিকে, এদিন ষষ্ঠ স্ট্যাটাস রিপোর্টে সিবিআই আদালতকে জানায়, ৬ জন নতুন সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী বলেন, এডিজে আদালত সাজা ঘোষণার সময় অন্তত চারজন আধিকারিকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। গাফিলতির অভিযোগও উঠেছিল। সিবিআই কি তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে? সিবিআইয়ের কাছে মামলাটি যাওয়ার আগে কি তথ্য ও প্রমাণ লোপাট হয়েছে, তার কী তদন্ত হয়েছে? একটি বড় টিম ঘটনা চেপে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। প্রমাণ লোপাট করেছে। খুনের ঘটনাকে আত্মহত্যা বলার জন্য হাসপাতালের এমএসভিপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন? নির্যাতিতার মা ও বাবা যা তথ্য জানাতে চেয়েছেন, তা গোপন জবানবন্দি আকারে নেওয়া হয়নি। ঘটনাস্থলে নির্যাতিতাকে কে প্রথম দেখেছে, সিবিআই কি তা যাচাই করেছে? বিচারক প্রশ্ন করেন, কে প্রথম ফোন করে পরিবারকে জানিয়েছিলেন? পরিবারের আইনজীবীর দাবি, এভাবে তদন্ত হলে নির্যাতিতার মা ও বাবা কোনওদিন বিচার পাবেন না।
সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ধর্ষণ ও খুনের ক্ষেত্রের জরুরি প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। আদালত পুলিশ অফিসারদের একাংশের ভূমিকার কথা বলেছে। কিন্তু সবাই খুন ও ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন। সেটি এই তদন্তের অংশ নয়। সেটি বিভাগীয় বিষয়। সিবিআই বৃহত্তর ষড়যন্তেরের তদন্ত করছে। টালা থানার ওসি ধর্ষণে যুক্ত কি না, তার তদন্ত হচ্ছে না। আগামী ১৪ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন। সেদিন আরও একটি রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে পারে সিবিআই।