গাছ আর জঙ্গলে ঘেরা উড়ালপুলের উপরে উঠলে মনে হবে, ডুয়ার্সের কোনও জায়গা। উড়ালপুলের রেলিং, রাস্তার বাতিস্তম্ভ ঢেকে গিয়েছে জঙ্গলে। দেওয়াল থেকে বেরিয়েছে গাছ। বিমানবন্দরের আড়াই নম্বর গেটের অদূরে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযোগকারী ওই উড়ালপুলের একটি অংশের এমনই দশা। বিধাননগর কমিশনারেটের অভিযোগ, একাধিক বার বলা সত্ত্বেও উত্তর দমদম পুরসভা জঙ্গল কাটেনি।
ওই উড়ালপুল নিয়ে রীতিমতো চাপে রয়েছে বিধাননগর কমিশনারেটের ট্র্যাফিক বিভাগ। ত্রুটির কারণে প্রায় ১৩ বছর ধরে উড়ালপুলে ভারী গাড়ির ওঠা বন্ধ। যার জেরে এক দিকে যেমন যশোর রোডে গাড়ি থামিয়ে লরি চলাচলের ব্যবস্থা করতে নাজেহাল হচ্ছে পুলিশ, অন্য দিকে, যানজটে নাকাল হচ্ছেন যাত্রীরাও। নেই পর্যাপ্ত আলোও। যে কারণে যশোর রোড রাতের দিকে বিপজ্জনক।
প্রসঙ্গত, গত বছর বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের কাছেই লরির ধাক্কায় এক পরিবারের তিন জন মারা গিয়েছিলেন। তাঁরা একটি স্কুটারে চেপে ফিরছিলেন। তার পরেও যশোর রোডে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি। রাস্তা সারাই থেকে জঙ্গল সাফাই বা আলো বসানোর মতো কাজ নিয়ে উত্তর দমদম পুরসভা, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এবং পূর্ত দফতরের মধ্যে দায় ঠেলাঠেলি চলে বলেই অভিযোগ।
এক দুপুরে শরৎ কলোনির কাছে গিয়ে দেখা গেল, বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েমুখী উড়ালপুলের শাখার শুরুর অংশ জঙ্গলে ঢেকে রয়েছে। পাতার আড়ালে ভারী গাড়ি নিয়ে উড়ালপুলে ওঠার সতর্কীকরণ বোর্ডটিও। অভিযোগ, অন্ধকার উড়ালপুলে রাতে মদ্যপানের আসর বসে। মোটরবাইকে মহিলাদের নিয়ে যাতায়াতের সাহস পান না অনেকেই। পুলিশের এক কর্তা জানান, লরির যানজট এড়াতেই উড়ালপুলটি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ১৩ বছর তাতে লরি চলাচল বন্ধ। শরৎ কলোনির দিক থেকে এখন বাস বা গাড়িও আর উড়ালপুলে উঠতে চায় না। ফলে, যানজট তৈরি হয় বিরাটির দিক থেকে কলকাতাগামী রাস্তায়। তিন নম্বর গেটের কাছ থেকে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের দিকে লরি ও বাস ঘোরাতে হয়। যার জেরে রাতে যানজট বিরাটি ছাড়িয়ে যায়।
পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘উড়ালপুলটির ভবিষ্যৎ কী, জাতীয় সড়ক বিভাগ বলতে পারবে। উড়ালপুলের উপরের জঙ্গল পরিষ্কার করতে এবং এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে উত্তর দমদম পুরসভাকে একাধিক চিঠি দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।’’ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছেন, ওই উড়ালপুল নিয়ে বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘উড়ালপুলের সমস্যা মিটতে একটু সময় লাগবে। একটি সংস্থা তাদের সমীক্ষা-রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী যা যা করণীয়, করা হবে। ট্রাক বা লরি যাতে উড়ালপুলের উপর দিয়ে চলতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শীতের আগেই উড়ালপুলের উপরের সব আলো ঠিক করে দেওয়া হবে।’’
ভাঙা রাস্তা ও পর্যাপ্ত আলোর অভাব-সহ যশোর রোড নিয়ে নানা অভিযোগ শোনা গিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। তাঁরা জানান, বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে থেকে বারাসতগামী রাস্তার পাশে সার্ভিস রোডের বেহাল দশা। উত্তর দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান বিধান বিশ্বাস বলেন, ‘‘জঙ্গল আমরা কেটে দেব। বড় গাছ ছাঁটতে হলে পরিবেশ দফতরের অনুমতি লাগবে। রাস্তার আলোর জন্য পূর্ত দফতরের অনুমতি পেতে দেরি হয়। অনুমতির জন্য বিভিন্ন দফতরের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। তাই সব সময়ে সব কাজ করা যায় না। তবু সম্প্রতি হাই মাস্টের জন্য ২২টি আলো লাগিয়েছি।’’