• ‘আমরা সুরক্ষিত নই’, ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সকে জানালেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা
    এই সময় | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: জাতি বিদ্বেষ থেকে যৌন হেনস্থা, বহিরাগতদের দাপট থেকে র‍্যাগিং— যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পড়ুয়াদের মুখ থেকে এমনই সব ফৌজদারি অপরাধের ঘটনার বর্ণনা শুনে গেলেন সুপ্রিমকোর্ট নিয়োজিত ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা। এমন একটি দিনে তাঁরা যাদবপুরে এসেছিলেন, যার ঠিক আগের রাতে ওই ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীর জলে ডুবে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

    এই ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে দেশের ক্যাম্পাসগুলিতে পড়ুয়াদের উপর নানা রকম অত্যাচার, হেনস্থা, র‍্যাগিং এবং আত্মহত্যার ঘটনা কমানোর উদ্দেশ্যে। সেই লক্ষ্য নিয়ে দেশ জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন টাস্ক ফোর্সের বিশেষজ্ঞরা। বৃহস্পতিবার আইআইটি খড়্গপুরের পর তাঁরা এসেছিলেন যাদবপুরে।

    ঠিক কী কী জানিয়েছেন পড়ুয়ারা?

    এ দিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক সেরে পড়ুয়াদের সঙ্গে একেবারে আলাদা করে কথা বলেন টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তা-ব্যক্তিরা কেউ ছিলেন না। বৈঠকে পড়ুয়ারা অভিযোগ করেন, ক্যাম্পাসে অনেক সময়েই তাঁদের জাতি বিদ্বেষের ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। যৌন হেনস্থার ঘটনাও ঘটে। অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি, অ্যান্টি র‍্যাগিং সেল কোনও কিছুই তেমন সক্রিয় নয়। পড়ুয়াদের অনেকে জানেনই না যে কোনও সমস্যার মুখোমুখি হলে কার কাছে অভিযোগ করবেন। কোনও হেল্প লাইন নম্বরও নেই। পাশাপাশি ক্লাসে অনেক সময়েই বাংলা মিডিয়ামের পড়ুয়াদের হেয় করা হয়। অনেকেই ইংরেজি ঠিক করে বলতে না পারার জন্য অপমানিত হন। তাতে শিক্ষকদের কেউ কেউ জড়িত বলেও অভিযোগ করেছেন পড়ুয়ারা।

    পাশাপাশি ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের হাতে মার খাওয়া, হেনস্থা হওয়ার মতো একাধিক ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন পড়ুয়ারা। অটিজ়ম রয়েছে এমন বা দৃষ্টিশক্তিহীন পড়ুয়াদের অনেকেই সুরক্ষিত বোধ করেন না বলে জানিয়েছেন। ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কারণে চাপ দেওয়া, এক ঘরে করে রাখার মতো ঘটনাও ঘটছে বলে টাস্ক ফোর্সকে জানিয়েছেন পড়ুয়ারা। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসিটিভি না থাকা, নিরাপত্তারক্ষীদের অভাব প্রসঙ্গেও অনেকে সরব হয়েছেন।

    সূত্রের খবর, নানা অব্যবস্থা নিয়ে টাস্ক ফোর্সের সদস্যরাও প্রশ্ন তুলেছেন। কেন ১৪ হাজার ছাত্রছাত্রীর জন্য মাত্র একজন মনোবিদ রয়েছেন,কাউন্সেলিং সেন্টার কেন ঠিক মতো কাজ করে না, পড়ুয়াদের মনের খবর রাখতে অধ্যাপকদের কেন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি? এই রকম নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় কর্তৃপক্ষকে। টাস্ক ফোর্সের এক সদস্য বলেন, ‘আমরা অবাক যে যাদবপুরে কোনও কেন্দ্রীয় হেল্পলাইন নম্বর নেই। র‍্যাগিংয়ের সর্বভারতীয় যে হেল্প লাইন নম্বর তাও ডিসপ্লে করা নেই। পড়ুয়ারা বিপদে পড়লে যাবে কোথায়?’

    যদিও টাস্ক ফোর্সকে আশ্বস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভিসি অমিতাভ দত্ত জানিয়েছেন, দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য অমন আলি বলেন, ‘আমরা সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ছাত্রীর দুঃখজনক মৃত্যুর কথাও শুনেছি। যা রিপোর্ট করার সুপ্রিম কোর্টকেই আমরা করব।’

  • Link to this news (এই সময়)