কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’ (এনআইটি)-তে দু’দিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন পুরীর শঙ্করাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতী। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার তাঁর কাছে ‘দীক্ষা’ নেনকিছু পড়ুয়া-সহ কয়েক জন। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন অনুষ্ঠানের যৌক্তিকতা নিয়ে বিতর্ক বেধেছে। তবে দীক্ষার কথা মানেননি কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার।
সূত্রের খবর, বুধবার ‘যুবশক্তি ও ভারতীয় জ্ঞান পরম্পরা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে পুরীর শঙ্করাচার্য ভাষণ দেন। ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। এ দিন ফের এক দফা প্রশ্নোত্তর ও মত বিনিময় পর্ব হয়। এর পরে, প্রতিষ্ঠানের পুরনো অতিথিশালায় ‘দর্শন ও দীক্ষা’ কর্মসূচি হয়। সেখানে এনআইটি-র কয়েক জন শিক্ষার্থী ‘দীক্ষা’ নেন। তাঁদেরই এক জন, বি টেক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রৌনক রায়ের বক্তব্য, ‘‘জীবনের অনেক প্রশ্নের উত্তর প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় পাওয়া যায় না। মার্গদর্শকের দরকার হয়। শঙ্করাচার্য তেমনই এক জন।’’সূত্রের দাবি, অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনে দীক্ষাদান হয়েছে। তবে যাঁরা দীক্ষা নিয়েছেন, তাঁরা এ বিষয়ে বিশদ কিছু বলতে চাননি। শঙ্করাচার্য এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের কাছে মন্তব্য করতে চাননি।
এনআইটি-র ডিরেক্টর অরবিন্দ চৌবের বক্তব্য, ‘‘জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, ভারতীয় জ্ঞান পরম্পরা লুপ্ত হওয়ার পথে। সেই জ্ঞান পরম্পরাকে পুনরুজ্জীবিত করতে শঙ্করাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করি।’’ তাঁর দাবি, তিনি ডিরেক্টর হিসাবে এখানে যোগ দেওয়ার পরে, এক ছাত্রের হঠাৎ মৃত্যু হয়। কিছু দিন আগে এক প্রবীণ অধ্যাপকেরও আচমকা মৃত্যু হয়। তাঁর কথায়, ‘‘মনে করেছি, শঙ্করাচার্যের আগমনে প্রতিষ্ঠানে ‘পজ়িটিভ এনার্জি’ আসবে।’’ তবে ডিরেক্টরের দাবি, ‘দীক্ষার’ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। কেউ ‘দীক্ষা’ নিয়েছেন কি না, তা-ও অজানা।
বিজ্ঞান মঞ্চের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি শ্রীকান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এমন কথাবার্তা কুসংস্কার ছাড়া, কিছু নয়। সরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টরের এমনবক্তব্যে আমরা বিস্মিত। জানি না, দেশের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কারিগরি শিক্ষাকোন পথে চলেছে!’’ রাজ্যসভার তৃণমূলসাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এনসিইআরটি-র সিলেবাস থেকে ডারউইন বাদ পড়ছেন। ইতিহাসের জায়গায় পুরাণ ঠাঁই পাচ্ছে। যুক্তিবাদ আক্রান্ত। মানুষকে কুসংস্কার দিয়ে অজ্ঞানতার অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এনআইটি-র ঘটনা তারই অংশ।’’
কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের যদিও দাবি, ‘‘এনআইটি-তে দীক্ষাদানের অনুষ্ঠান হচ্ছে না।এটি অপপ্রচার। শঙ্করাচার্য এসেছেন,বেদান্ত নিয়ে আলোচনা হয়েছে।দুর্গাপুরে গিয়ে দেখেছি, আলাদা হোটেলেসাক্ষাৎ ও দীক্ষার ব্যবস্থা আছে।’’