ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ায় বিহারে আধার কার্ডকে দ্বাদশ নথি হিসেবে মান্যতা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তা কার্যকরও করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এই পরিস্থিতিতে এ রাজ্যে এসআইআর শুরুর আগে আধার কার্ড করানোর দায়িত্ব জেলা প্রশাসনগুলিকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরের মাধ্যমে তাকরতেও বলেছেন।
কিন্তু সরকারি সূত্রের বক্তব্য, চাইলেই নিজেরা সে কাজ দ্রুত শুরু করতে পারবে না রাজ্য। কারণ, আধার প্রক্রিয়া শুরুর সময় থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্য রেজিস্ট্রার হিসেবে সক্রিয় ছিল না। তাই বিকল্প পথের সন্ধানশুরু হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের বক্তব্য, আধার কার্ড তৈরির পদ্ধতি যখন চালু হয়, তখন প্রতিটি রাজ্য সরকারকে রেজিস্ট্রার করে দেয় আধার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউআইডিএআই। অন্যান্য রাজ্যগুলি রেজিস্ট্রার হিসেবে সক্রিয় হলেও ব্যতিক্রম ছিল এ রাজ্য। কারণ, আধার নিয়ে শুরু থেকেই তাদের ভিন্ন অবস্থান ছিল। প্রায় দেড় দশক পরে এই প্রয়োজন অনুভূত হলেও, আচমকা রেজিস্ট্রার হিসেবে কাজ শুরু করতে পারবে না নবান্ন। অভিজ্ঞ আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এখন সেই কাজ শুরু করতে চাইলে ইউআইডিএআই-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাদের বিধি-পদ্ধতি মেনে শুরু করা যাবে কাজ। তাতে পাঁচ-ছ’মাস লেগে যেতে পারে।
প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, আধার পরিকাঠামো জিপিএস-সংযুক্ত হওয়ায় কাছাকাছি কোনও আধার কেন্দ্র থেকে তা ‘দুয়ারে সরকারে’র শিবিরে আনা সম্ভব নয়। বিকল্প পদ্ধতির সন্ধান শুরু করা হয়েছে এই অবস্থায়। আধিকারিকদের একাংশের ব্যাখ্যা, এমনিতে বিদ্যালয় শিক্ষা দফতর পড়ুয়াদের আধার কার্ড তৈরি করিয়ে দেওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। তবে তাদের পক্ষে সাধারণ নাগরিকদের কার্ড তৈরির দায়িত্ব সামলানো সম্ভব নয়। দ্বিতীয় রাস্তা হিসেবে জেলাগুলির যে আধার সেবা-কেন্দ্র বা ডাকঘরে আধার প্রক্রিয়া হয়, প্রশাসনিক উদ্যোগে সেখানে মানুষকে পাঠিয়ে কার্ড করানো সম্ভব। কিন্তু কাদের কার্ড নেই, কাদের সংশোধন প্রয়োজন, তা খুঁজে বের করা সহজ কাজ নয়।
শুরুতে আধার নিয়ে আপত্তি থাকলেও, এখন রাজ্যের সব সরকারি পরিষেবায় সেই কার্ড থাকাই রীতিতে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, কমবেশি ৫% আধার কার্ড তৈরি হওয়া এখনও বাকি। তাই প্রায় আড়াই হাজার বাংলা সহায়তা কেন্দ্র-কে (বিএসকে) আধার তৈরি বা সংশোধনের পরিকাঠামো হিসেবে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নবান্ন। ইউআইডিএআই-এর সঙ্গে কথা বলে যন্ত্রপাতি কিনে, কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত থাকলেও, চূড়ান্ত অনুমোদন মেলেনি। ফলে রাজ্যের হাতে থাকা বিএসকে-গুলিতেও সেই কাজ এখন শুরু করা সম্ভব নয়।