মণিপুর সফরে মোদিকে ঘিরে ধুন্ধুমার! কংগ্রেসের ব্যাপক বিক্ষোভ...
আজকাল | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: মণিপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে ঘিরে শনিবার ইম্ফলে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। ২০২৩ সালের জাতিগত সংঘাতের পর এটাই মোদির প্রথম সফর হলেও কংগ্রেস তা প্রবলভাবে সমালোচনা করে এবং ইম্ফলে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখায়। ঐতিহাসিক কাঙ্গলা ফোর্টের অদূরে, মণিপুর কংগ্রেস ভবনের সামনে সকাল থেকে দলীয় কর্মীরা প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁদের হাতে ছিল পোস্টার—“বিজেপি শাসনে মণিপুর জ্বলছে” এবং “সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধ করো”। পুলিশ দ্রুত মোতায়েন হয়ে কংগ্রেস কর্মীদের পার্টি কার্যালয়ের ভেতরে আটকে দেয়, যাতে তাঁরা কাঙ্গলা ফোর্টে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের দিকে মিছিল করতে না পারেন। পাশাপাশি অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী এনে সমগ্র এলাকাজুড়ে কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়।
প্রধানমন্ত্রী মোদি শনিবার সকালে মণিপুরে পৌঁছে প্রথমে কুকি-জো অধ্যুষিত চুরাচান্দপুর সফর করেন। সেখানে তিনি জাতিগত সংঘাতের ফলে বাস্তুচ্যুত মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং শান্তির আহ্বান জানান। মোদী বলেন, “আমি সব সংগঠনকে অনুরোধ করব শান্তির পথে এগিয়ে যেতে। মণিপুরের অগ্রগতির জন্য শান্তি অপরিহার্য। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি, সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে।” এরপর তিনি ইম্ফলের কাঙ্গলা ফোর্টে ₹১,২০০ কোটি টাকার পরিকাঠামো প্রকল্পের উদ্বোধন ও জনসভায় ভাষণ দেওয়ার কথা। তবে বিরোধী দল কংগ্রেস এই সফরকে “ভান” ও “প্রতীকী পদক্ষেপ” বলে অভিহিত করেছে।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এক্সে পোস্ট করে লিখেছেন, “৮৬৪ দিন ধরে হিংসা চলছে: ৩০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন, ৬৭ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত, ১,৫০০-র বেশি আহত। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ৪৬টি বিদেশ সফর করেছেন, কিন্তু মণিপুরে নিজের নাগরিকদের পাশে দাঁড়াতে আসেননি। শেষবার তিনি এসেছিলেন জানুয়ারি ২০২২-এ—নির্বাচনের সময়!” প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও কটাক্ষ করে বলেন, “ওর অনেক আগেই আসা উচিত ছিল। দুঃখজনক যে এতদিন ধরে মানুষকে কষ্ট ভোগ করতে দিলেন, এত মানুষ মারা গেলেন, এত পরিবার ধ্বংস হয়ে গেল। এরপর তিনি এলেন। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”
উল্লেখ্য, ২০২৩ সাল থেকে মণিপুরে বিভিন্ন দফায় জাতিগত সংঘাত মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সহিংসতায় ২৬০ জনেরও বেশি প্রাণহানি হয়েছে, বহু মানুষ গৃহহারা হয়েছে। ক্রমবর্ধমান অশান্তির জেরে মুখ্যমন্ত্রী এন. বিরেন সিং পদত্যাগ করেন। বর্তমানে মণিপুর রাষ্ট্রপতির শাসনের অধীনে রয়েছে, যা ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। মোদির সফরকে ঘিরে সরকারের তরফে শান্তি ও উন্নয়নের বার্তা দেওয়া হলেও, বিরোধী শিবিরের তীব্র প্রতিবাদে স্পষ্ট হয়েছে যে মণিপুরের ক্ষত এখনো উন্মুক্ত। জনগণের দুঃখ-যন্ত্রণার পর এতদিন পরে প্রধানমন্ত্রীর সফরকে অনেকেই কেবল রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন।