• দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশনে খুনের পিছনে ছিল না কোনও প্রণয়ঘটিত বিষয়, অভিযুক্তকে জেরা করে আসল কারণ জানতে পারল পুলিশ ...
    আজকাল | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • বিভাস ভট্টাচার্য:  সঙ্গে থাকা স্কুল ব্যাগের মধ্যে সবসময় একটি ছুরি থাকত। যদি কেউ মারে তবে সেটা আটকাতে ছুরি 'কাজে' লাগবে। দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশনে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত রানা সিংকে জিজ্ঞাসা করে একথা জানতে পেরেছেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের তদন্তকারীরা। তার এই চিন্তাভাবনা দেখে রীতিমতো কপাল কুঁচকে উঠেছে তদন্তকারীদের। ধৃতকে আজ শনিবার আদালতে পেশ করা হবে। 

    রাজ্য পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত জানিয়েছে, শুক্রবার ঘটনার দিন যখন সে মনোজিৎ এবং অন্যান্য পড়ুয়াদের সঙ্গে শ্যামবাজার মেট্রো স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিল তখন মনোজিৎ তাকে জিজ্ঞাসা করে সে খৈনি খাবে কি না? রানার দাবি, সে না করলে মনোজিৎ তাকে অশ্লীল ইঙ্গিত করে। রানা সেটা দেখে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে এবং মনোজিতের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ট্রেন চলে আসায় তারা সবাই দক্ষিণেশ্বরগামী ট্রেনে উঠে পড়ে। এরপর ট্রেনের মধ্যেও তার সঙ্গে মনোজিতের হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু সঙ্গী পড়ুয়া এবং কামরার অন্য যাত্রীদের হস্তক্ষেপে সেটা আর গড়াতে পারেনি। 

    এরপর যখন দক্ষিণেশ্বরে নামে তখন ফের শুরু হয় গোলমাল এবং সেখান থেকে হাতাহাতি। এরপরেই রানা রাগের মাথায় মনোজিতকে ব্যাগ থেকে ছুরি বের করে চালিয়ে দেয়। ছুরির কোপে বুকে গুরুতর আঘাত পায় মনোজিত। বাকিরা যখন মনোজিতের শুশ্রুষায় ব্যস্ত ছিল তখন সেই সুযোগে ঘটনাস্থল থেকে রানা পালিয়ে বরানগর পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে তার বাড়ি চলে যায়। বাড়ি গিয়ে সে গোটা ঘটনার কথা খুলে বলে। অভিযোগ, পরিবারের একজনের পরামর্শে সে নিজের মোবাইল ফোন সুইচ অফ করে দেয়। এরপর ছুরিটি বাড়ির মধ্যেই একটি নর্দমার মধ্যে ফেলে দেয়। পুলিশ যখন তার বাড়ি যায় তখন রানা সেখানে ছিল না। 

    সূত্র অনুযায়ী জানা যায়, রানার খোঁজে ঘরে তল্লাশি চালানোর সময় পুলিশের হাতে আসে তাদের রান্নার গ্যাস বুকের বইটি। পরীক্ষা করে তদন্তকারীরা দেখতে পান সেখানে একটি বিহারের ঠিকানা আছে। যেটা পরবর্তী সময়ে রানার বর্তমান ঠিকানায় পাল্টানো হয়েছে। তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন অভিযুক্ত বিহারে পালিয়ে যাওয়ার মতলব করতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে খোঁজ নিয়ে তদন্তকারীরা জেনে নেন হাওড়া থেকে বিহারগামী ট্রেনের সময়সূচি কী আছে। সেইমতো তদন্তকারীরা রওনা দেন হাওড়ায়। শেষপর্যন্ত পুলিশের অনুমান সত্যি হয়। সন্ধ্যার বিহারগামী ট্রেন ধরতে রানা, তার বাবা, মা ও দিদিকে সঙ্গে করে হাওড়া স্টেশনে ঢুকতেই জাল গুটিয়ে নেয় পুলিশ। ধরা হয় রানাকে। শুক্রবার রাতেই খুনে ব্যবহৃত ছুরিটি পুলিশ উদ্ধার করেছে। 

    এর আগে এই ঘটনার নেপথ্য কারণ হিসেবে সন্দেহ করা হয়েছিল পিছনে কোনো প্রণয়ঘটিত বিষয় থাকতে পারে। কিন্তু রাজ্য পুলিশের ওই সূত্রটি পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, ঘটনার পিছনে কোনোরকম প্রণয় বা ওই জাতীয় কিছু নেই। আচমকাই রাগের মাথায় এই ঘটনা ঘটেছে। এর পাশাপাশি আরও যে একটি বিষয় সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে সেটা হল কীভাবে ছুরি নিয়ে একজন যাত্রী মেট্রোর মতো জায়গায় প্রবেশ করল? সেখানে যে নজরদারির অভাব ছিল সেটা এই ঘটনায় একেবারেই প্রমাণ হয়ে যায়।
  • Link to this news (আজকাল)