• জলে ডুবেই মৃত্যু ছাত্রীর, ফের প্রশ্নের মুখে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ফের প্রশ্নের মুখে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ২০২৩ সালে মেন হস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুর পর বসেছিল বেশকিছু সিসিটিভি। কড়া হয়েছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কিন্তু তাতে যে বিশেষ কোনও পরিবর্তন হয়নি তা বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক ছাত্রীর রহস্যমৃত্যুর ঘটনা থেকে প্রমাণিত হল। এদিন রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটের সামনের ঝিল থেকে উদ্ধার করা হয় ইংরাজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীর দেহ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখান এবিভিবি সমর্থরকরা। অন্যদিকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা উপাচার্যের ঘরে গিয়ে ডেপুটেশন দেন। ওই ছাত্রীর মৃত্যু কীভাবে হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ছাত্রীর বন্ধুদের দাবি, বৃহস্পতিবার রাতে মদ্যপ অবস্থায় ঝিলে নেমেছিলেন তিনি। বন্ধুরাই তাঁকে অচৈতন্য অবস্থায় জল থেকে উদ্ধার করেন। এরপর রাতে স্থানীয় কেপিসি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। যদিও বন্ধুদের দাবি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। শুক্রবারই ঘটনাস্থলে পৌঁছে নমুনা সংগ্রহ করেছে গোয়ান্দা বিভাগের ফরেন্সিক দল। এদিনই মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, জলে ডুবেই মৃত্যু হয়েছে অনামিকার। শরীরের বাইরে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। তবে তিনি মদ্যপ ছিলেন কি না তা জানতে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে। সেই রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন তদন্তকারীরা।

    মৃতের নাম অনামিকা মণ্ডল (২১)। তিনি নিমতার বাসিন্দা। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটের কাছে গৌর দাস বাউল ও তাঁর দলকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ‘ড্রামা ক্লাব’। এই অনুষ্ঠানে দর্শক হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন অনামিকা। তারপর বন্ধুদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যায়ের ক্যাম্পাসে থাকা একটি ঝিলের সামনে বসে মদ্যপান করেন তিনি। এমনই দাবি করেছেন তাঁর বন্ধুরা। তাঁদের আরও দাবি, ৫ বন্ধু মিলে ঝিলের পাড়ে বসে তাঁরা মদ্যপান করছিলেন। হঠাৎ সকলেই জলে নামার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। অনামিকাও জলে নামতে চান। তবে সাঁতার না জানায় স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে জলে নামতে বারণ করেন বন্ধুরা। কিন্তু বারণ না শুনে আচমকাই জলে নেমে যান অনামিকা। কিছুক্ষণের মধ্যেই তলিয়ে যান তিনি। বিপদ বুঝে বন্ধুরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। যদিও বন্ধুদের এই দাবি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। রাতেই অনামিকার পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হলে তাঁরা হাসপাতালে ছুটে আসেন। শুক্রবার সকালে যাদবপুর থানাতেও যান তাঁরা। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

    ২০২২ সালে দোলের সময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঝিলে পড়েই মৃত্যু হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক প্রাক্তন ছাত্রর। ২০২৩ সালে হস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। পর পর এই সব ঘটনায় বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জানা গিয়েছে, চার নম্বর গেটের সামনে মোট তিনটি সিসিটিভি থাকলেও তার একটিও ঝিলের দিকে ঘোরানো নেই। তাই বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাস্থলে কী ঘটেছে তা কোনও সিসিটিভিতেই ধরা পড়ার কথা নয়। কিন্তু ওই ঝিলের দিকে যাওয়া আসার রাস্তা সিসিটিভির আওতায় রয়েছে। সেই ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ড্রামা ক্লাবের অনুষ্ঠান চলা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অমিতাভ দত্ত জানিয়েছেন, রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলার অনুমতি ছিল না। কিন্তু অনেক সময় একাধিক কারণে নির্ধারিত সময়ের বাইরেও অনুষ্ঠান চালানোর প্রয়োজন হয়। যদিও যখন ঘটনাটি ঘটে সেই সময় অনুষ্ঠান চলছিল কি না তা স্পষ্ট হয়নি। উল্লেখ্য, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার জন্য এই ড্রামা ক্লাবটি চালান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পড়ুয়ারাই। তাঁরা ‘রুহানিয়ত’ নামের একটি তিনদিন ব্যাপী নাট্যোৎসবের আয়োজন করেছিল। শুক্রবারই নাট্যোৎসবের শেষ দিন ছিল। কিন্তু ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যুর আবহে শুক্রবার অনুষ্ঠানটি হয়নি।

    ইতিমধ্যেই অনামিকার বিশেষ বন্ধুর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘আমার ভালবাসায় নিশ্চয়ই কোনও খামতি ছিল। আমার পূর্বজন্মের নিশ্চয়ই ছিল কোনও পাপ। তাই শুধু আমাকে না, সকলকে ছেড়ে চলে গেলি। আর কোনও কথা নেই। রাগ নেই। হেসেও উঠবি না আর। আমাকে এই নরক থেকে নিয়ে যেতে পারতিস মিষ্টু।’ অনামিকার প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, তিনি বরাবরই শান্ত স্বভাবের ও মেধাবী ছিলেন। তাঁর এই করুণ পরিণতি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না প্রতিবেশীরা।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)