উত্তর কলকাতার ‘ভদ্র কথা’, মৃত্যুর ৩৪ বছর পর পুজোয় নিজের পাড়ায় ফিরছেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ!
প্রতিদিন | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
অভিরূপ দাস: ছবি দেখে এ প্রজন্মের সিংহভাগ তাঁকে চিনবে না। একশো জনের মধ্যে আশিজন চুল ছিঁড়বে মাথার। কিন্তু গলা? ‘‘ওই ব্যারিটোন শুনে কণ্ঠের মালিককে চিনে নেবে আমার পাড়ার পাঁচ ছ’বছরের কচিকাঁচারাও।’’ জানিয়েছেন, শুভাশিস চক্রবর্তী। মহালয়ার ভোরে যাঁর গলায় মোহিত বিশ্বজোড়া বাঙালি, সেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণর পাড়ায় থাকেন তিনি। জানিয়েছেন, মৃত্যুর ৩৪ বছর বাদে নিজের পাড়ায় ফিরছেন শব্দভেদী কণ্ঠের মালিক। নিজের পাড়া উত্তর কলকাতা সর্বজনীন দুর্গোৎসবে এবার থিম বীরেন্দ্রকৃষ্ণ। পুজো এবার পা দিল ৯৪ বছরে। বিগত ৯৩ বছর ধরে সাবেকি পুজো করে এসেছে উত্তর কলকাতার এই পাড়া। এবার তারা থিমের দুনিয়ায়। কী হতে পারে থিম? বেশিক্ষণ ভাবতে হয়নি বলরাম ঘোষ স্ট্রিটের পুজোর সদস্যদের।
‘এবার শুধু ‘ভদ্র’ কথা।’ উত্তর কলকাতার এ এলাকা পড়ে কলকাতা পুরসভার দশ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে। শ্যামবাজারের গলির গলি তস্য গলি পেরিয়ে ৩০বি রামধন মিত্র লেন। এখানেই মোহাবিষ্ট কণ্ঠের জনকের জন্ম। তার গা লাগোয়া রাস্তায় পুজোর আয়োজন করে উত্তর কলকাতা সর্বজনীন। কণ্ঠের মালিকের নামাঙ্কিত বীরেন্দ্র মঞ্চেই বসেন দশভুজা। শহরজুড়ে থিম মানেই বিলিতি সব স্থাপত্য। অন্যপথে বীরেন্দ্রকৃষ্ণর পাড়া।‘‘অন্য কিছু থিম হতে পারে?’’ প্রশ্ন ছুড়েছেন শুভাশিস। ‘‘কিছু মানুষ এমন থাকেন, যাঁদের চেহারা মুছে গেলেও চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে কণ্ঠ। তেমনই একজন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।’’
তিনের দশকে রেডিওতে মহালয়ার ভোরে প্রথম যখন অনুষ্ঠান শুরু করেছিলেন। তৎকালীন গোঁড়া ব্রাহ্মণসমাজ বলেছিলেন, মহালয়ার ভোরে অব্রাহ্মণের কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ শোনানোর কোনও যৌক্তিকতা নেই। এই ঘটনার পর অনুষ্ঠানটিকে সরিয়ে ষষ্ঠীর ভোরে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শ্রোতাদের বিপুল চাপে ১৯৩৬ সাল থেকে পুনরায় অনুষ্ঠানটিকে মহালয়া তিথিতেই বাজানো শুরু হয়। এমনই তাঁর জনপ্রিয়তা। সেদিক খেয়াল করে এই পুজোর উদ্বোধন হচ্ছে মহালয়ার কাকডাকা ভোরে।
শেষ জীবনে বীরেন্দ্রকৃষ্ণর আক্ষেপ ছিল..‘‘অনেক কিছুই পেলাম না।’’ আজ তাঁর পাড়ায় বাজছে গান, ‘‘পেঁজা তুলোর মেঘ দিয়েছে নীল আকাশে পাড়ি। ঢাকের বোলের তালে এল দুগ্গা বাপের বাড়ি..’’। সে গান শুনে কয়েক পা হেঁটে এলেই মিটবে আক্ষেপ। বীরেন্দ্র মঞ্চের পাশের বাড়িগুলো বদলে গিয়েছে শিল্পীর তুলির টানে। এক লহমায় এ পাড়া ফিরে গিয়েছে বছর সত্তর আগের এক সকালে। বড়বাড়ির নাটমন্দিরে ঠাকুর দালান তৈরির কাজ শেষের দিকে। উলটোদিকে আকাশবাণী। দেওয়াল জুড়ে আঁকার কাজ। রয়েছে বীরেন্দ্র কৃষ্ণর অবয়বও। মহালয়ার একাধিক অনুষঙ্গ উঠে আসবে এলইডি আলোয়। এ পুজোয় এবার প্রতিমা শিল্পী সুশান্ত দাস। সমগ্র থিম ভাবনা ও রূপায়ণে শম্ভু সাহা। তিনের দশকের উত্তর কলকাতার রক তৈরি হয়েছে। ওই তো কে বসে আড্ডা দিচ্ছে। ঘ্যাঁচ করে এসে থামে আকাশবাণীর গাড়ি। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র যাচ্ছেন মহিষাসুরমর্দিনী পড়তে।