• ভারত কোথায় দাঁড়িয়ে?
    আজকাল | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: আমাদের সমাজে বহুদিন ধরে একটি প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে—গণতন্ত্র আসলে কতটা কার্যকর? গণতন্ত্র কি সত্যিই নাগরিকদের সমৃদ্ধি, আর্থিক উন্নতি ও সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করে, নাকি একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাই দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতি এনে দেয়? মার্কিন গবেষণা সংস্থা অ্যাটলান্টিক কাউন্সিল তাদের সাম্প্রতিক Freedom and Prosperity Indices-এর মাধ্যমে এই জটিল প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে।

    প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত দু’টি সূচকেই গড়ের নিচে অবস্থান করছে। ফ্রিডম ইনডেক্সে ভারতের স্কোর ৬১.৭, যা বিশ্বব্যাপী ১৬৪ দেশের মধ্যে ৯৫তম। প্রসপারিটি ইনডেক্সে ভারতের স্কোর ৫৫.৬, যা একই তালিকায় ১১১তম। অর্থাৎ, ভারত বর্তমানে ‘কম স্বাধীন’ ও ‘কম সমৃদ্ধ’ দেশগুলির কাতারেই রয়েছে।

    সবচেয়ে চিন্তার বিষয়, ২০১৪ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে ভারতের রাজনৈতিক স্বাধীনতার স্কোর ১৪ পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে—যা বিশ্বে অন্যতম বড় পতন। প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের রাজনৈতিক স্বাধীনতার সামগ্রিক নিম্নগতি মূলত ভারতের মতো বৃহৎ জনসংখ্যার দেশগুলির পরিস্থিতির কারণে আরও প্রকট হয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক অধিকার—যেমন সংগঠনের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষ তথ্যপ্রাপ্তি—এই ক্ষেত্রে ভারতের অবনতি সবচেয়ে বেশি।

    প্রসপারিটি ইনডেক্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সংখ্যালঘুদের অবস্থা। ভারতে এই সূচকে দীর্ঘদিন ধরে স্কোর কম ছিল, তবে ২০১৮ থেকে আরও অবনতি দেখা গেছে। বর্তমানে ভারতের স্কোর নেমে এসেছে ৪৭.৪-এ। ধর্ম, জাত, ভাষা ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য বৃদ্ধির প্রভাব এখানে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

    প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইনের শাসন সমৃদ্ধির সঙ্গে সবচেয়ে গভীরভাবে সম্পর্কিত। ভারতে আইনগত স্বাধীনতার সূচক গত দুই দশকে কিছুটা উন্নতি করেছে, তবে নাগরিক বিচারব্যবস্থার ব্যয়বহুল ও জটিল প্রক্রিয়া এবং ফৌজদারি বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এখনো গুরুতর সমস্যা হয়ে রয়ে গেছে।

    অ্যাটলান্টিক কাউন্সিল একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছে—গণতন্ত্র দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক উন্নতির শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করে। গবেষণা অনুযায়ী, কোনও দেশ গণতন্ত্রে রূপান্তরিত হলে বিশ বছর পর তার মাথাপিছু আয় গড়ে ৮.৮% বেশি হয় স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার তুলনায়। অর্থাৎ, তাৎক্ষণিক উন্নতির প্রতিশ্রুতি না থাকলেও গণতন্ত্র দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।

    বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতার চিত্রও সুখকর নয়। ডেনমার্ক যেখানে স্বাধীনতার সূচকে সর্বোচ্চ ৯৩.৮ স্কোর করেছে, আফগানিস্তান সেখানে সর্বনিম্ন ১৬.৯। গত ১২ বছরে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক স্বাধীনতা ক্রমশ নিম্নগামী, আর কোভিড-১৯ মহামারির সময় সেই পতন আরও দ্রুত হয়েছে। ২০২৪ সালে—যা বহু দেশের জন্য নির্বাচন-বর্ষ ছিল—তবুও স্বাধীনতার অবনতি চলতে থেকেছে। উন্নত দেশগুলিকে গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের হুমকি গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে, কারণ এর দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।

    উন্নয়নশীল দেশগুলিকে অবশ্যই রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও আইনের শাসনকে মজবুত করতে হবে, যাতে অর্থনৈতিক মুক্তির অর্জিত সুফল দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হয়। ভারতের জন্য বার্তা সুস্পষ্ট। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ খোলা থাকলেও রাজনৈতিক স্বাধীনতার অবক্ষয় ও সংখ্যালঘুদের অবস্থা দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। স্বাধীনতা হয়তো তাৎক্ষণিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করে না, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সমৃদ্ধি ও ন্যায়সঙ্গত উন্নয়নের একমাত্র পথ গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাই।
  • Link to this news (আজকাল)