• টাকার রেকর্ড পতন! ডলারের বিপরীতে সর্বকালের সর্বনিম্ন স্তরে ভারতীয় মুদ্রা
    আজকাল | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক:  টানা চাপের মুখে ভারতীয় টাকার আবারও রেকর্ড পতনের শিকার হলো। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) আন্তর্দেশীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে টাকা ৩৬ পয়সা হ্রাস পেয়ে ৮৮.৪৭ টাকায় (অস্থায়ী হিসাবে) মার্কিন ডলারের বিপরীতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে টাকা ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছল। এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর টাকা ৮৮.৩৬ টাকায় নেমে সর্বনিম্ন রেকর্ড করেছিল। দিনের শুরুতে ৮৮.১১ টাকায় লেনদেন শুরু হলেও বাজার চলাকালীন সময়ে তা দ্রুত পতন হয়ে ৮৮.৪৭ টাকায় পৌঁছে যায়।

    ফরেক্স ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মার্কিন ডলারের পুনরুদ্ধার, বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার এবং ক্রুড অয়েলের দামের ঊর্ধ্বগতি টাকার উপর প্রবল চাপ তৈরি করেছে। তাছাড়া ওয়াশিংটনের সঙ্গে চলমান শুল্ক-বিবাদের কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট আরও গভীর হয়েছে। গত মাস থেকে কার্যকর হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক ভারতে বিনিয়োগের পরিবেশকে নড়বড়ে করে তুলেছে। রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে ইতিমধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতের ঋণ ও শেয়ারবাজার থেকে ১১.৭ বিলিয়ন ডলার তুলে নিয়েছেন। এতে টাকার দুর্বলতা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।বুধবার কিছুটা স্বস্তি মিলেছিল যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, নয়াদিল্লির সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি এগোচ্ছে। সেদিন টাকা সামান্য ঘুরে দাঁড়িয়ে ৪ পয়সা বেড়ে ৮৮.১১ টাকা অবধি পৌঁছেছিল। তবে বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কেবল অস্থায়ী স্বস্তি, কারণ ডলারের চাহিদা এবং বিশ্ব  বাজারের অস্থিরতা টাকাকে পতনমুখী অবস্থায় রেখেছে।

    অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার ডলার সূচক (Dollar Index) ০.২২ শতাংশ বেড়ে ৯৭.৯৯-এ পৌঁছেছে, যা প্রায় ৯৮-এর কাছাকাছি। ছয়টি প্রধান আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিপরীতে ডলারের এই শক্তিশালী অবস্থানও টাকার উপর চাপ বাড়িয়েছে। এর সঙ্গে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম বৃদ্ধিও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) নিয়মিত বাজারে হস্তক্ষেপ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করে টাকার পতন ঠেকানোর চেষ্টা করছে, যাতে আকস্মিক অস্থিরতা এড়ানো যায়। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি পণ্য ও পরিষেবা কর (GST)-এ ছাড় ঘোষণা করেছে, যাতে মার্কিন শুল্কের প্রভাব কিছুটা লাঘব হয়। তবু সামগ্রিকভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বড় ধরনের নীতিগত পদক্ষেপ জরুরি হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

    চলমান মার্কিন শুল্ক বিরোধ, বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার এবং ক্রুড অয়েলের দাম বৃদ্ধিই মূলত টাকার  উপর চাপ সৃষ্টি করছে। ডলার সূচক প্রায় ৯৮ ছুঁইছুঁই অবস্থায় থাকায় বিশ্ব  বাজারে ডলারের শক্তি আরও স্পষ্ট হয়েছে। চলতি বছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারত থেকে ১১.৭ বিলিয়ন ডলার সরিয়ে নিয়েছেন। রিজার্ভ ব্যাংক ডলার বিক্রি করে পতন ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তবে বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, আস্থার সংকট কাটাতে বৃহত্তর নীতিগত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
  • Link to this news (আজকাল)