ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে আর ফেরা হল না, পুজোর মুখে দিল্লিতে বাংলার শ্রমিকের অস্বাভাবিক মৃত্যু ...
আজকাল | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মিল্টন সেন, হুগলি: রাজধানী দিল্লিতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হল হুগলির এক পরিযায়ী শ্রমিকের। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল ছেলের। কে জানত, কালচক্রে ওটাই মা এবং ছেলের মধ্যে হয়ে শেষ কথা হয়ে যাবে। অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে ধনিয়াখালির পরিযায়ী শ্রমিকের! মৃতদেহ ফিরিয়ে আনতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দ্বারস্থ হয়েছে শ্রমিকের পরিবার।
পুজোর ঠিক আগেই ঘটে যাওয়া এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় শোকের ছায়া ধনেখালির বেলমুড়ি গ্রামে। মৃতের নাম সঞ্জীব ভূমিজ (২৮)। তাঁর বাড়ি বেলমুড়ি গ্রামে। পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় মৃতদেহ ফিরে পেতে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে আবেদন জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের দাবি, সরকার উদ্যোগ নিয়ে ছেলের মৃতদেহ তাদের কাছে ফিরিয়ে দিক।
অবিবাহিত সঞ্জীব। বিগত প্রায় দশ বছর ধরে বিভিন্ন রাজ্যে গয়নার কাজ করেছেন। মাস নয়েক আগে পরিবারের এক আত্মীয় মনসা মালিকের সঙ্গে রাজধানী দিল্লিতে গিয়েছিলেন গয়নার কাজ করতে। পুজোর সময় বাড়ি ফেরার কথা ছিল সঞ্জীবের। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। এই প্রসঙ্গে সঞ্জীবের মা রীতা ভূমিজ জানিয়েছেন, গত ১১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ছেলে সন্ধে ও রাতে দু'বার তাঁকে ফোন করেছিল। ওই দিনই তাঁর সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল ছেলের।
সেদিন ছেলে তাঁর সঙ্গে ভাল ভাবেই কথা বলেছিলেন। তখন তাঁকে কিছু জানাননি। জানাননি শরীর খারাপের খবর। তারপর রাত একটা নাগাদ বাড়িতে ফোন আসে। ফোন জানানো হয় ছেলের বুকে নাকি যন্ত্রণা হচ্ছে। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। সেখানে চিকিৎসক দেখে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। বুকে ব্যথার সঙ্গে শুরু হয়েছিল শ্বাসকষ্ট। অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় সঞ্জীবের।
এরপরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সঞ্জীবের দেহ ময়নাতদন্তে পাঠান। আত্মীয় মনসা ফোন করে সঞ্জীবের পরিবারকে মৃত্যুর ঘটনা জানান। বর্তমানে যেখানে কাজ করছিলেন, সেখানে কাজ করে দুটো পয়সার মুখ দেখেছিলেন তিনি। পুজোর সময় বাড়ি ফিরে সরকারের দেওয়া ঘরটা ঢালাই করার কথা বলেছিলেন। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিল সঞ্জীব। গত ৯ মাস আগে মৃত্যু হয় তাঁর বাবার। স্বামী ও সন্তানকে এক বছরের মধ্যে হারিয়ে শোকস্তব্ধ মা এখন ছেলের দেহ ফিরে পেতে ইতিমধ্যেই রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্নার মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন।
পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ। মন্ত্রীর সহযোগিতায় মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে আবেদন জানানো হয়েছে পরিবারের তরফে। সঞ্জীবের মাসি সন্ধ্যা মাইতি বলেন, ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে এভাবে তাঁদের পরিবারের সন্তানকে হারাতে হবে ভাবতেও পারেননি। আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। অতদূর গিয়ে গাড়ি ভাড়া করে মৃতদেহ আনা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। রাজ্য সরকারের কাছে তাঁদের আবেদন তারা যেন সঞ্জীবের মৃতদেহ দ্রুত ফেরত আনার ব্যবস্থা করে।
রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না তাঁদের খুব সাহায্য করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে আবেদন জানিয়েছেন। সেখান থেকে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন। শনিবার মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়িতে যান ধনিয়াখালির বিডিও এবং ধোনেখালি থানার পুলিশ আধিকারিকরা।