• কলকাতায় কেন্দ্রীয় সরকারের চৌহদ্দিতে নির্বিঘ্নেই চলল ‘দ্য বেঙ্গল ফাইল্‌স’-এর বিশেষ প্রদর্শনী, পাহারায় কেন্দ্রীয় বাহিনী
    আনন্দবাজার | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সিনেমা আনুষ্ঠানিক ভাবে মুক্তি পেয়ে গিয়েছিল আগেই। তবে পশ্চিমবঙ্গের কোনও প্রেক্ষাগৃহে সেটি জায়গা পায়নি। এই অবস্থায় শনিবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় কলকাতায় জাতীয় গ্রন্থাগারের ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ভাষা ভবন’-এ ‘দ্য বেঙ্গল ফাইল্‌স’ সিনেমার ‘বিশেষ প্রিমিয়ার’-এর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিনেমার পরিচালক বিবেকরঞ্জন অগ্নিহোত্রী এবং তাঁর স্ত্রী তথা এই সিনেমার অন্যতম অভিনেত্রী পল্লবী জোশীও।

    পশ্চিমবঙ্গে সিনেমার ট্রেলার মুক্তি ঘিরে যে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল, তার পরে শনিবার ‘বিশেষ প্রিমিয়ার’-এর জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থাপনা ছিল চোখে পড়ার মতো। আয়োজক গোষ্ঠী ‘খোলা হাওয়া’ একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন হলেও, এই সংগঠনের পদাধিকারীরা মূলত বিজেপির পরিচিত রাজনীতিকেরাই। এই সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি পদে রয়েছেন বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য তথা প্রাক্তন সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত। শনিবারের প্রদর্শনীতে প্রবেশাধিকার ছিল আমন্ত্রণমূলক। তবে পুরো প্রেক্ষাগৃহই দর্শকে পরিপূর্ণ ছিল। জাতীয় গ্রন্থাগারের ভাষা ভবনের ভিতরের আসনসজ্জা গ্যালারির মতো। দর্শকাসন তো বটেই, ভাষা ভবনে বসার জায়গার মাঝে গ্যালারির ধাপে ধাপে দাঁড়িয়ে অনেকে সিনেমা দেখেছেন। এই উৎসাহের কথা তুলে ধরে আয়োজকদের দাবি, ছবিটি যে কলকাতার বা বাংলার মানুষের আবেগের প্রতি কোথাও একটা আবেদন রেখেছে, তা এই উৎসাহ থেকেই স্পষ্ট।

    বিকেল ৫টা থেকে সিনেমাটির ‘স্ক্রিনিং’ শুরু হয়। তবে আগে থেকেই জমায়েত শুরু হয়ে গিয়েছিল। সিনেমার স্ক্রিনিং শেষ হয় রাত প্রায় সাড়ে ৮টা নাগাদ। জাতীয় গ্রন্থাগারের ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ভাষা ভবন’-এ সিনেমা প্রদর্শনীর জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। তাই মুম্বই থেকে বিশেষ স্ক্রিন, আলো এবং অন্য বেশ কিছু সরঞ্জাম নিয়ে আসা হয় এই বিশেষ ‘স্ক্রিনিং’-এর জন্য। আয়োজকদের দাবি, ঝাঁ চকচকে প্রদর্শনীই করা গিয়েছে। যে কোনও আধুনিক সিনেমা হলের মতোই ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে ‘দ্য বেঙ্গল ফাইল্‌স’ সিনেমাটি দেখানোর জন্য।

    সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, সিনেমার প্রদর্শনী ঘিরে কঠোর নিরাপত্তার বন্দোবস্ত। জাতীয় গ্রন্থাগারের মূল ফটক থেকে শুরু করে ভাষা ভবনের প্রবেশদ্বার পর্যন্ত সর্বত্রই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আগন্তুকদের সকলকে দফায় দফায় ‘চেক’ করা হয়েছে। নিরাপত্তায় এতটাই কড়াকড়ি ছিল যে আয়োজক সংস্থা খোলা হাওয়ার পদাধিকারীদেরও উপযুক্ত প্রমাণপত্র দেখিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়েছে।

    ‘দ্য বেঙ্গল ফাইল্‌স’ সিনেমাটি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে শুরু থেকেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। সিনেমাটির ট্রেলার মুক্তি বাতিল করে দিয়েছিল কলকাতার নামী সিনেমা হল ‘চেন’। পরের দিন ইএম বাইপাস সংলগ্ন বিলাসবহুল হোটেলে ফের ট্রেলার মুক্তির আয়োজন হয়। পুলিশি হস্তক্ষেপে সে অনুষ্ঠানও মাঝপথে থেমে যায়। পরে সিনেমাটি মুক্তি পেলেও পশ্চিমবঙ্গের কোনও প্রেক্ষাগৃহেই তা জায়গা পায়নি। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা চৌহদ্দিতে (জাতীয় গ্রন্থাগারের ভাষা ভবনে) সিনেমাটির ‘বিশেষ প্রিমিয়ার’ আয়োজন যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

    তবে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা চৌহদ্দিতে সিনেমা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করলেও নিশ্চিন্ত থাকতে পারেননি আয়োজকেরা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে প্রদর্শনীর আয়োজন তেমনটাই ইঙ্গিত করছে। দর্শক পরিচয়ে প্রদর্শনীতে প্রবেশ করে কেউ গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করতে পারেন, আয়োজকেরা সেই আশঙ্কাও করেছিলেন বলে মনে করছেন অনেকে। বস্তুত, শুক্রবারই বিজেপির এক যুবনেতা বলেছিলেন, ‘‘কলকাতায় বিজেপির বিভিন্ন বিক্ষোভ বা আন্দোলনের দিনগুলিতে কলকাতা পুলিশ রেল বা মেট্রো স্টেশনে ঢুকেও আমাদের কর্মীদের ধরপাকড় করে। ফলে জাতীয় গ্রন্থাগারে অনুষ্ঠান হলেও তা যে একেবারে বাধাহীন হবে, আমরা সে বিষয়ে নিশ্চিত নই।’’ জাতীয় গ্রন্থাগারে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রহরায় সিনেমার প্রদর্শনীর নেপথ্যে এটিও একটি কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

    এই ‘বিশেষ প্রিমিয়ার’ সম্পন্ন হওয়ার পরে আয়োজক সংগঠন ‘খোলা হাওয়া’র সভাপতি স্বপন আনন্দবাজার ডট কম-কে বলেন, “বাধা এলেই যে মাথানত করতে হবে, তার কোনও মানে নেই। সেটা আমরা দেখিয়ে দিলাম।” স্বপনের কথায়, “ছবিটি কেমন হয়েছে, তা মানুষ বিচার করুক। তা নিয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই। কারও পছন্দ হতে পারে, কারও অপছন্দও হতে পারে। কিন্তু পছন্দ বা অপছন্দ হওয়ার জন্য আগে তো ছবিটি দেখা দরকার। ছবি দেখার অধিকার কেন কেড়ে নেওয়া হবে? আমরা সেই অধিকারই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম। সফল হয়েছি বলেই আমাদের মনে হয়।”

    অন্য দিকে, তৃণমূলের কোনও মুখপাত্র এই প্রদর্শনীর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। সূত্রের খবর, তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব মুখপাত্রদের বলে দিয়েছেন এই ‘দ্য বেঙ্গল ফাইল্‌স’ ক’জন লোক দেখল, না দেখল, তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেওয়া মানে, ছবিটিকে আরও বেশি প্রচার দেওয়া। ফলে সে পথ এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)