নবম-দশমে ‘পাশ’, এ বার একাদশ-দ্বাদশের পরীক্ষা! আরও এক ‘কঠিন’ রবিবারের জন্য তৈরি এসএসসি
আনন্দবাজার | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আবার একটা রবিবার। আবার এক বার ‘পরীক্ষা’য় বসতে চলেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে ‘কঠিন’ পরীক্ষা দেবে তারাও।
গত রবিবার ছিল এসএসসির নবম-দশম শ্রেণিতে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা। এই রবিবার রয়েছে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় বসার জন্য পরীক্ষার্থীরাও যেমন প্রস্তুতি নিয়েছেন, তেমন ‘সুষ্ঠু’ ভাবে পরীক্ষার আয়োজন করার প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে এসএসসি। কোনও গাফিলতি বা ভুল করতে নারাজ তারা। অনেকেরই প্রশ্ন, গত রবিবারের মতো এই রবিবারও ‘লেটার মার্কস’ নিয়ে ‘পাশ’ করতে পারবে তো এসএসসি?
আগের, অর্থাৎ ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষা ঘিরে বিস্তর দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। তাতে স্বাভাবিক ভাবে মুখ পুড়েছিল কমিশন এবং রাজ্য সরকারের। সুপ্রিম কোর্টেও ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিল হয়ে গিয়েছে। তাতে চাকরি খুইয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে সেই পরীক্ষাই আবার নতুন করে নিতে হচ্ছে এসএসসি-কে। এই পরীক্ষায় যাতে নতুন করে কোনও দুর্নীতি বা ভুল না-হয়, সে দিকে কড়া নজর কমিশনের।
রবিবার একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসতে চলেছেন ২,৪৬,৫০০ পরীক্ষার্থী। ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে ‘বিশুদ্ধ’ পরীক্ষা পদ্ধতিতে এ বারও কোনও ত্রুটি রাখতে চায় না স্বশাসিত এসএসসি। টুকলি বা প্রশ্নফাঁসের মতো অভিযোগ যাতে উঠতে না-পারে তাই বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে কমিশন। অনেক নিয়মে পরীক্ষার্থীদের বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কী কী নিয়ম মানতে হবে পরীক্ষার্থীদের তা বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে কমিশন।
কমিশন কী কী নিয়ম করেছে? জানা গিয়েছে, স্বচ্ছ পেন (কালো বা নীল কালি) এবং স্বচ্ছ জলের বোতল নিয়েই শুধুমাত্র পরীক্ষার হলে ঢুকতে পারবেন। সমস্ত নথি স্বচ্ছ ফাইল বা ফোল্ডারে নিয়ে আসা যাবে। এ ছাড়া ফোন বা মূল্যবান সামগ্রী পরীক্ষার্থীর ব্যাগে থাকলে তা পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে রাখতে হবে, সে জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকবে। পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে ব্যাগ রাখার নির্দিষ্ট জায়গা করেছে কমিশন। অন্যথা ব্যাগ রাখা যাবে না বলেই জানিয়েছে তারা। পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার আগে সব পরীক্ষার্থীরই দেহ তল্লাশি করা হবে। হাতে রাখতে হবে অ্যাডমিট কার্ড। শুধু তা-ই নয়, পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার সময় কড়া নজরদারি চালানো হবে। যদি কেউ নকল বা টুকলি করার চেষ্টা করতে ধরা পড়েন, তবে তার পরীক্ষা বাতিলও হতে পারে বলে জানিয়েছে কমিশন।
রবিবার পরীক্ষা শুরু হবে বেলা ১২টা থেকে। শেষ হবে দুপুর দেড়টায়। তবে পরীক্ষাকেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকেই ঢুকতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা। পৌনে ১২টা পর্যন্ত পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে পারবেন তাঁরা। ঘড়ি, ক্যালকুলেটর, মোবাইল বা যে কোনও প্রকার ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেট নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করা যাবে না। গত রবিবারের মতো এই রবিবারও পরীক্ষার্থী এবং অন্যদের জন্য হেল্পলাইন নম্বর খোলা থাকছে।
একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা ৪৭৮টি কেন্দ্রে নেওয়া হবে। নবম-দশমের তুলনায় পরীক্ষার্থী এবং কেন্দ্রের সংখ্যা কম হলেও নিরাপত্তায় কোনও রকম ফাঁক রাখতে চাইছে না কমিশন। গত রবিবারের নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় শুধু এ রাজ্যের পরীক্ষার্থীরাই নন, ভিন্রাজ্য থেকে এসেও পরীক্ষা দিয়েছেন এমন পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম নয়। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষাতে ভিন্রাজ্য থেকে পরীক্ষা দিতে আসবেন অনেকে, জানিয়েছে এসএসসি। ভিন্রাজ্যের পরীক্ষার্থীদের প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে কোনও চাকরি নেই, তাই ছেলেমেয়েরা এখানে চলে আসছে। আমরা কি বাইরের রাজ্য থেকে ছেলেমেয়েগুলোকে আসলে তাদের অপমান করব? তারা হিন্দি বলছে বলে তাড়া করব? আমরা তা করব না।’’ শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, ‘‘স্বচ্ছতার সঙ্গে এখানে পরীক্ষা হবে।’’ ভিন্রাজ্যের কেউ যদি বাংলায় এসে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পান, তবে সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ‘বড় জয়’ হিসাবেই দেখতে চান ব্রাত্য।
একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রশাসনিক স্তরে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা করা আছে। সরকার, দফতর এবং এসএসসি নির্ভুল ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে।’’ পরীক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষামন্ত্রীর আবেদন,‘‘শান্ত ভাবে পরীক্ষা দিন। আশা রাখছি পরীক্ষা নির্বিঘ্নে শেষ হবে।’’
শুধু ৪৭৮টি কেন্দ্রে রবিবারের পরীক্ষা নেওয়া হবে তা নয়, এসএসসির দফতরও একটি পরীক্ষাকেন্দ্র! তিন চাকরিপ্রার্থীর জন্য এসএসসি দফতরকে ‘সেন্টার’ করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। সেই নির্দেশ মেনে কমিশনের দফতরেও পরীক্ষা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, ওই তিন চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষার ফর্ম ফিল আপের সময় বিষয় বাছতে ভুল করেছিলেন। এর পরেই তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে সে কথা জানান। তাঁদের আবেদন ছিল, তাঁরা যাতে ঠিকমতো পরীক্ষা দিতে পারেন, তার ব্যবস্থা যেন করা হয়। সেই আবেদনে মান্যতা দিয়েই উচ্চ আদালত, কমিশনকে তাদের দফতরেই ওই প্রার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেয়।