হিংসার ২৭ মাস পর মণিপুরে পৌঁছে বার্তা , শান্তি ফিরিয়েছি আমরাই: মোদি
বর্তমান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ২৭ মাস হয়ে গিয়েছে। ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, হিংসা, প্রাণহানিতে মণিপুরে আগুন জ্বলেছে। আগুন নিভেছে। ২৬০ জন প্রাণ হারিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া। নারীদের চরম লাঞ্ছনা দেখে শিউরে উঠেছে দেশ। বিরোধীরা প্রশ্ন করেছে, প্রধানমন্ত্রী একবারও মণিপুরে যাওয়ার সময় পেলেন না? এত কিছুর পর অবশেষে শনিবার নরেন্দ্র মোদি মণিপুরে গেলেন। এবং বললেন, ‘মণিপুর নামের সঙ্গে মণি শব্দটি আছে। মণি অর্থাৎ রত্ন। উত্তর-পূর্ব ভারতের মাথার উজ্জ্বল মণি হবে মণিপুর।’ যদিও ২০২৩ সালের মে মাসের সেই নৃশংস ঘটনা অথবা তৎপরবর্তী ভয়ঙ্কর জাতিদাঙ্গা নিয়ে বিশেষ কিছুই শোনা যায়নি তাঁর গলায়। শুধু বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ মণিপুরে হিংসা ছড়িয়েছিল। শান্তি ফিরেছে। স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি। আমি আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলেছি। আর আশ্রয়শিবিরে গিয়ে দেখেছি, শান্তি আর আশার সূর্যোদয়ের ইঙ্গিত।’ এমনকী সংঘর্ষের অন্যতম ভরকেন্দ্র চূড়াচাঁদপুরে সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এও দাবি করলেন, ‘অতীতে উত্তর-পূর্ব ছিল অশান্ত এবং হিংসাপূর্ণ। বিগত ১১ বছরে আমরা মণিপুরের নানাবিধ সংঘাত এবং সমস্যা দূর করে শান্তি ফিরিয়ে এনেছি। আমরা মণিপুরকে শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীকে পরিণত করতে চলেছি। মণিপুরের সামগ্রিক উন্নয়নে যা করেছি, সেটা স্বাধীনতার পর থেকে আর কোনও সরকার করেনি।’ এদিন প্রথমে কুকি প্রভাবিত চূড়াচাঁদপুরে হিংসায় গৃহহীনদের সঙ্গে দেখা করেন মোদি। ঘোষণা করেন, ‘আমরা ৭ হাজার পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছি গৃহহীনদের জন্য।’ ৫০০ কোটি টাকা পৃথকভাবে এই ঘরছাড়াদের জন্য বরাদ্দ করেছে তাঁর সরকার। দেওয়া হচ্ছে স্পেশাল ৩ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজও।
২৭ মাস এই অগ্নিভূমি থেকে বহু দূরে থাকার পর এদিন প্রথমে চূড়াচাঁদপুর এবং তারপর মেইতেই প্রভাবিত ইম্ফলে যান মোদি। উভয় জায়গাতেই তাঁর বার্তা, ‘পাহাড় এবং উপত্যকাকে শান্তির বন্ধনে যুক্ত করতেই হবে। শান্তি ফেরাতে আমি এবং আমার সরকার এভাবেই সবরকম সহায়তা করে যাব।’ তাঁর দীর্ঘ অনুপস্থিতি যে মণিপুরবাসীর মধ্যে মোটেই কোনও ক্ষোভের সঞ্চার করেনি এই বার্তা দিতে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মরিয়া। তাই তিনি বলেন, ‘আজ বৃষ্টি হচ্ছিল। তাই আমার হেলিকপ্টার উড়তে পারেনি। পরমাত্মার হয়তো এটাই ইচ্ছা ছিল। তাই আমি সড়কপথে এসেছি। আর যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে জাতীয় পতাকা হাতে মণিপুরবাসী রাস্তার দু’পাশে আমাকে স্বাগত জানিয়েছে, তাতে আমি আপ্লুত।’
যদিও প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধতে ছাড়েনি বিরোধীরা। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে ‘এক্স’ হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘নরেন্দ্র মোদিজির মণিপুরে তিন ঘণ্টার যাত্রাবিরতি কোনও করুণা নয়, এটা প্রহসন এবং মারাত্মক অপমানও। আপনি এর মধ্যে ৪৬টি বিদেশসফর করেছেন। কিন্তু নিজের দেশের নাগরিকদের সহানুভূতি জানাতে একবারও মণিপুর যেতে পারেননি।’ প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কটাক্ষ, ‘দু’বছর পর উনি যে মণিপুর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এতে আমি খুশি। তবে এই কাজটা আরও আগে করতে পারতেন। ওখানে যা ঘটেছে, সেটা উনি হতে দিয়েছেন, এটাই দুর্ভাগ্যের।’
মেডিকেল কলেজ থেকে রেল সংযোগ—মণিপুরের ক্ষোভে প্রলেপ দিতে এদিন নিজের সরকারের পরিকাঠামো উন্নয়নের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন মোদি। ইম্ফলের সভায় সাধুবাদ জানিয়েছেন মণিপুরের নারীশক্তিকে। বলেছেন, মণিপুরের অর্থনীতির চালিকাশক্তি নারীরাই। জাতিদাঙ্গাবিধ্বস্ত মণিপুরে তাই মোদির বিশেষ উপহার, মহিলাদের জন্য হস্টেল করে দেওয়া হবে।