নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ: পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অর্ণব সরকার মালদহের মকদমপুরের একটি আবাসনে নিজের সহকর্মীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে আচমকাই থমকে দাঁড়ালেন। একটি ছবি দেখে বেশ কিছুক্ষণ তাঁকে চেনার চেষ্টা করছিলেন তিনি। বিষয়টি বুঝতে পেরে এগিয়ে এলেন ওই আবাসনের আবাসিক তথা প্রাক্তন সম্পাদক পার্থসারথি আচার্য। তিনি জানতে চাইলেন, ‘কিছু বলবেন?’ কিছুটা থমকে গিয়ে একটি ছবির দিকে আঙুল তুলে অর্ণববাবুর উত্তর, ‘বাকি সবাইকে চিনতে পেরেছি। তবে ইনি কে?’ পার্থসারথিবাবু বলেন, ‘ইনি উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। তিনি কালাজ্বরের ওষুধের আবিষ্কারক। এক সময় ভারতের সর্ববৃহৎ ব্লাড ব্যাংক তৈরির পিছনের মূল কারিগর। অর্ণববাবু বললেন, ‘সত্যিই জানা ছিল না।’ তবে আপনাদের এই কাজকে স্যালুট জানাতে আমরা বাধ্য।’
মালদহের মদদুমপুর এলাকার রামকৃষ্ণ আবাসনে এসে বহু মানুষকেই এমনভাবে থমকে যেতে দেখা যায়। সাধারণত আবাসনগুলিও চাকচিক্যে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার খেলাতেই মেতে থাকে। তবে, মালদহ শহরের বুকে এমন একটি আবাসন রয়েছে, যা বাকিগুলিকে সৃজনশীলতায় টেক্কা দেবে। এই আবাসনের নীচে থেকে উপরে প্রত্যেকটি জায়গায় জুড়ে রয়েছে মনীষীদের বড় বড় ছবি। যে ছবির নীচে অত্যন্ত যত্ন সহকারে তাঁদের জন্ম এবং মৃত্যু দিন খোদাই করে লেখা রয়েছে। যাতে দেশের মনীষীদের ভুলে না যায় মানুষ। তা নিশ্চিত করতেই এমন উৎকৃষ্ট কাজ করেছেন আবাসনে আবাসিকেরা। যা এক কথায় নজর কাড়ে সকলের। প্রত্যেক মনীষীর জন্মদিন এবং মৃত্যু দিনে তাঁদের ছবিতে মাল্যদান করার পাশাপাশি তাঁদের জীবন, আদর্শ নিয়ে আলোচনা করা হয়। যাতে কোনও মনীষীর ছবি কখনও অপরিষ্কার না থাকে, তা নিশ্চিত করতে বাড়তি নজরদারিও রাখেন আবাসিকেরা। এ যেন স্বাধীনতার আগে দেশের বিখ্যাত মানুষদের স্মরণ করার এক অন্য উপায়।
বর্তমান সম্পাদক সুকুমার রায় বলেন, আমাদের আগের সম্পাদক পার্থসারথি আচার্য এই উদ্যোগ সকলের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়েছিলেন। আমরা এখনও এই মনীষীদের স্মরণ করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। আমাদের আবাসনে সরস্বতী পুজো এবং বিশ্বকর্মা পুজোর দিন, মনীষীদের জন্ম ও মৃত্যুর দিন স্মরণ করি।
পার্থসারথি বাবু পেশায় ব্লাইন্ড স্কুলের মিউজিক টিচার। প্রায় দু’বছর আগে আবাসনে ৩৫টি পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ১৯ হাজার টাকা খরচ করে মোট ১৩জন মনীষীর ছবি এই আবাসনের নীচে এবং প্রত্যেকটি ফ্লোরে বসানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। আবাসিকদের কেউ কেউ প্রথমে সামান্য আপত্তি জানালেও বর্তমানে এই কাজ আবাসনের গর্বের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পার্থবাবুর কথায়, মনীষীদের আমরা ডিজিটাল যুগে অনেকেই ভুলতে চলেছি। তাঁদের বিস্ময়কর কাজ স্মরণে রাখতেই এই উদ্যোগ। নিজস্ব চিত্র