স্বাভাবিক হয়নি পানিট্যাঙ্কি বাজার সীমান্ত পারাপার করলেন ১০৭৫ জন
বর্তমান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি ও সংবাদদাতা, নকশালবাড়ি: হিমালয়ের কোলে বিদ্রোহের আগুন আপাতত নিভেছে। নেপালের অন্তর্বতী সরকারের প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকি। তাঁর শপথ গ্রহণের পরও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি শিলিগুড়ির পানিট্যাঙ্কি বাজার। শনিবারও বন্ধ ছিল বাজারটি। সাত দিনে বাজারে ব্যবসায় লোকাসান প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। পুজোর মুখে এনিয়ে ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায়।
অন্যদিকে, এসএসবি সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন ৬৭২ জন ভারতীয় দেশে ফিরেছেন। ৪০৩ জন নেপালের নাগরিক নেপালে গিয়েছেন। প্রায় ৫০টি পেট্রপণ্যের লরি নেপালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। সীমান্তে রুটমার্চ চলছে। এদিকে, দেশের অস্থির অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন শিলিগুড়িতে পড়তে আসা নেপালের ছাত্রছাত্রীরা। তারা ভিডিও কল করে পরিবারের খোঁজখবর নিচ্ছে।
শিলিগুড়ি মহকুমার বাণিজ্য কেন্দ্রগুলির মধ্যে পানিট্যাঙ্কি বাজার অন্যতম। সেখানে মুদি দোকান, ওষুধের, সাইকেলের, গাড়ির যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম প্রভৃতির মোট ৯৪৮টি দোকান রয়েছে। পানিট্যাঙ্কি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক দীপঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, নেপালের ঝাপা জেলার কাকড়ভিটা, ধূলাবাড়ি, বিত্তামোড়, দমক, ইটরি প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দারা এখানে দৈনিক বাজার করতে আসেন। প্রতিদিন ৮-৯ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। গত সাত দিন ধরে তাঁরা আসতে পারছেন না। কারণ এখনও নেপালের গণপরিবহণ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। ফলে এদিনও পানিট্যাঙ্কি বাজার কার্যত বন্ধ ছিল। পুজোর মুখে সাত দিনে বাজারে প্রায় ৫৭ কোটি টাকার কারবার মার খেয়েছে।
এদিকে, দেশে ‘জেন জি’ বিদ্রোহ আপাতত মিটলেও শিলিগুড়ি ও দার্জিলিং পাহাড়ে পড়তে আসা নেপালের ছাত্রছাত্রীরা উদ্বিগ্ন। তাদের অধিকাংশ এখানে ইংরেজিমাধ্যম স্কুলের হস্টেলে থেকে পড়ে। উত্তরবঙ্গের সিবিএসই বোর্ডের স্কুল নিয়ে গঠিত একটি কমিটির সভাপতি শ্যামসুন্দর আগরওয়াল বলেন, সিবিএসই স্কুলগুলির মোট ছাত্রছাত্রীর ৫ শতাংশ নেপাল ও বাংলাদেশের। নেপালের ছাত্রছাত্রীরা হস্টেলে ভালোই রয়েছে। ওদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তাদের একাংশ নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছে। ফোন ও ভিডিও কলের মাধ্যমে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলছে।
অন্যদিকে, শনিবার ভারত-নেপাল সীমান্ত পানিট্যাঙ্কিতে দু’দেশের হাজার খানেক মানুষ পারাপার করেছে। বারোবিশার বাসিন্দা বিনয় বর্মন মাস দু’য়েক আগে নেপালের ভুট্টাবাড়িতে প্লাইউড কারখানায় কাজে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, অশান্তি চলাকালীন ফ্যাক্টরিতে বন্দি ছিলাম। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক। ছোট গাড়ি চলছে। দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। নতুন করে পরিস্থিতি খারাপ হলে সমস্যা হবে। তাই চলে এলাম। ভারতীয় পর্যটক উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা সর্বত হুসেন বলেন, সপ্তাহ খানেক আগে নেপালে ঘুরতে গিয়েছিলাম। অশান্তির জেরে আটকে পড়ি। হোটেলে এক’দিন বন্দি ছিলাম। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতেই দেশে ফিরলাম।
পানিট্যাঙ্কির মদনজোত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে মহিলা ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে। এদিন নেপালের কাকড়ভিটা পশুপতি ফুটবল ক্লাব খড়িবাড়ি জিওয়াইএসডি ক্লাবকে ১-০ গোলে হরায়। নেপাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কোচ ভারতচন্দ্র গুরুং বলেন, এই খেলা উভয় দেশের সম্পর্কে আরও দৃঢ় করবে।