দেবী দুর্গাকে মদনগোপালের ভোগ দেওয়া হয় প্রাচীন মায়াপুরের মন্দিরে
বর্তমান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: রীতি মেনে প্রথমে মন্দিরে মদনগোপালের বিগ্রহকে ভোগ নিবেদন করা হয়। তারপর সেই ভোগ দেবী দুর্গাকে দেওয়া হয়। নবদ্বীপের প্রাচীন মায়াপুরের শ্রীশ্রী রাধা মদনগোপাল মন্দিরে এমনই রীতিতে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। মন্দিরের অন্যতম সেবাইত প্রভুপাদ কৃষ্ণগোপাল গোস্বামী বলেন, পুজোর ক’দিন সকালে মহাস্নানের পর দেবীকে প্রথমে মিছরির শরবত, তারপর ফল ও পিঠেপুলির ভোগ দেওয়া হবে। মহাষ্টমীতে দেবীকে অন্ন, খিচুড়ি, বিভিন্ন ভাজা, নানা ব্যঞ্জন, পুষ্পান্ন, পরমান্ন, দই, হরেকরকম মিষ্টি সহ ছাপ্পান্নভোগ দেওয়া হয়। ওইদিন দেবীপ্রতিমার সামনে কুমারী পুজোও হয়। নবমীতে দেবীকে খিচুড়ি, দশমীতে দই-চিঁড়ে, বিভিন্ন মিষ্টি সহ ভোগ দেওয়া হয়। রাতে ভোগে থাকে লুচি, সুজি, ক্ষীর ছানা ও নানা মিষ্টি।
মহাষ্টমীতে নবদ্বীপের এই মন্দিরে ঐতিহ্যবাহী সাত শিবের পুজো হয়। নবমীতে পুজোর সময় সকলের মঙ্গলকামনায় দেবীপ্রতিমার মাথায় ফুল চাপানো হয়। পুজো চলাকালীন দেবীর সামনে আঁচল পাতা হয়। মাথা থেকে সেই ফুল আঁচলে পড়লে দেবীর কৃপালাভ হয়েছে বলে মনে করা হয়।
মহাপ্রভুর মা শচীমাতার গুরুদেব অদ্বৈতপ্রভু সিলেটে এই দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। পরে বাংলাদেশেই আনন্দগোপাল গোস্বামী ফের পুজো শুরু করেন। এরপর তাঁর ছেলে নিকুঞ্জগোপাল গোস্বামী দুর্গাপুজোর দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে কৃষ্ণগোপাল গোস্বামী নবদ্বীপে নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করে আসছেন। প্রায় ১৫০বছর ধরে বৈষ্ণবমতে এই পুজো হয়ে আসছে। সাবেকি একচালা বুলেনের সাজে প্রতিমা সাজানো হয়। পঞ্চমীর দিনই মণ্ডপে প্রতিমা আনা হয়। ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী-এই পাঁচদিন দেবীকে মদনগোপালের প্রসাদী ভোগ দেওয়া হয়। দশমীতে ভাগীরথী নদীতে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়।
কৃষ্ণগোপালবাবু বলেন, মন্দিরে রাধা মদনগোপাল, মহাপ্রভু, গোবিন্দ, লক্ষ্মী, গিরিরাজ বিগ্রহ রয়েছে। বছরের বেশিরভাগ দিন পরিবারের লোকজনকেই ভোগ রান্না করতে হয়। দেবী দুর্গার জন্য ব্রাহ্মণ ভোগ রান্না করেন। ওই পরিবারের বধূ তিয়াসা গোস্বামী বলেন, সাতবছর আগে বিয়ে হয়ে এখানে এসেছি। তারপর থেকে আমিও দেবীর পুজোর জোগাড় থেকে শুরু করে ভোগের রান্না করি। পুজোর অনেকদিন আগে থেকেই নিজে হাতে নাড়ু, খই, মুড়কি তৈরি করি। নাট মন্দিরে দেবী দুর্গার আগমনে বাড়ির পরিবেশ আনন্দে ভরে ওঠে।