• ইলেকট্রিকের তারে ঠেকে যাওয়া ছিপ ছাড়াতে গিয়ে প্রৌঢ়ের মৃত্যু, জখম ছেলে
    বর্তমান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, পুরুলিয়া: গ্রামেরই পুকুরে টিকিট কেটে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন বাবা ও ছেলে। ছেলের বঁড়শির টোপ গিলেছিল মাছ। ছিপে টান দিয়ে মাছ তুলতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। পুকুরপাড়ের উপরে থাকা ৪৪০ ভোল্ট বিদ্যুতের তারে লেগে ঠেকে যায় কার্বন ফাইবারের তৈরি ছিপ। তাতে বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে পড়েন ছেলে। তা দেখে এগিয়ে আসে বাবা। তিনি বঁড়শি থেকে মাছ ছাড়ানোর সময় ছিপটি ফের তারে ঠেকে যাওয়ায় তিনিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম ভজহরি সিং সর্দার(৫৫)। পুরুলিয়ার টামনা থানার চাগদা গ্রামের ওই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃতের বাড়ি ওই গ্রামেই।  যদিও পুকুর মালিকের দাবি, ঘাট ছেড়ে অন্যত্র না গেলে এই ঘটনা ঘটত না। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামেরই পরামানিকদের পুকুরে শনিবার টিকিট করে মাছ ধরার আয়োজন করা হয়েছিল। টিকিটের মূল্য ছিল ৫০০ টাকা করে। টিকিট কেটে নির্দিষ্ট সংখ্যক লোকই বাঁশের তৈরি মাচা বা ঘাট থেকে মাছ ধরতে পারবেন। সেখানেই এদিন ভজহরিবাবু ছেলে অবিনাশকে নিয়ে মাছ ধরতে যান। তাঁদের সঙ্গী হিসেবে আরও কয়েকজন ছিলেন। বঁড়শিতে টোপ গেঁথে ছিপ ফেলার পর সেখানে মাছ টোপ না গেলায় কিছুটা দূরে পুকুরের উঁচু পাড়ে গিয়ে অবিনাশ পুকুরে ছিপ ফেলে। কিছুক্ষণ পরই বঁড়শির টোপ মাছে গেলায় ছিপে টান দিয়ে তুলতে যান অবিনাশবাবু। তাঁর হাতে থাকা কার্বন ফাইবারের ছিপ উপরে থাকা হাই ভোল্টেজ বিদ্যুতের তারে ঠেকে যায়। তাতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ছিটকে পড়েন অভিনাশবাবু। তা দেখে বাবা ভজহরিবাবু বাঁশের মাচা থেকে নেমে এসে ছিপটি পায়ের আঙুলের মধ্যে ঢুকিয়ে বঁড়শি থেকে মাছটি ছড়াতে যান। সেই সময় কার্বন ফাইবারের ছিপটি আবার বিদ্যুতের তারে ঠেকে যাওয়ায় তিনিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর জখম হন।  

    ওই পুকুরের মালিক অজিত পরামানিক বলেন, ৫০০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে মোট ১১টি দল মাছ ধরছিল। ভজহরিবাবুদের একটি দল ছিল। ভজহরিবাবুর ছেলে তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সরে গিয়ে অন্যত্র মাছ ধরতে শুরু করে। সবাই গ্রামেরই তাই নিষেধ করা হয়নি। অবিনাশ যেখানে  মাছ ধরছিল, সেখানে পুকুরের পাড়টি বেশ উঁচু। বিদ্যুতের তারের সঙ্গে পুকুর পাড়ের দূরত্ব কম থাকায় ছিপটি তারে ঠেকে গিয়েছিল। 

    শনিবার দুপুরে পুকুরে গিয়ে দেখা যায়, এই ঘটনার পর অনেকেই মাছ ধরা বন্ধ করে দেন। তবে দু’একটি দল তখনও মাছ ধরছিল। পুকুর মালিক অজিতবাবু সহ অন্যান্যরা সেখানে বসেছিলেন। ওই পুকুরে মাছ ধরতে আসা একজন বলেন, ওই কার্বন ফাইবারের ছিপটি ছিল বিদ্যুৎ পরিবাহী। কেনার সময় বিক্রেতারাও ক্রেতাদের এবিষয়ে সতর্ক করে দেন। তবে কমিটির আরও সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত ছিল।  চাগদা গ্রামে ভজহরিবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির ভিতরে মৃতদেহ শায়িত রয়েছে। পাশের ঘরে ছেলে অবিনাশবাবু কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তিনি বলেন, চোখের সামনে সব দেখেও বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না। ভজহরিবাবুর স্ত্রী সারথিদেবী বলেন, ভোর বেলায় মেজ ছেলেকে নিয়ে মাছ ধরতে বেরিয়েছিল। দুপুর ২টো নাগাদ শুনতে পাই পুকুরপাড়ে বিদ্যুতের শকে স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। তবে ছেলে সুস্থ আছে। স্থানীয় সোনাইজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান চন্দনা মাহাত বলেন, গ্রামেই পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। গ্রামবাসীদের একাংশ বলেন, পুকুরপাড়ের উপর দিয়ে ৪৪০ ভোল্টের বিদ্যুতের তার গিয়েছে। কমিটি সর্তক থাকলে প্রাণহানির ঘটনা ঘটত না।
  • Link to this news (বর্তমান)