• নেপাল-ভারত সীমান্তে আটকে ৩০ হাজার টন ভোজ্যতেল বোঝাই ট্রাক
    বর্তমান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, হলদিয়া: নেপালে অশান্তির প্রভাব পড়েছে হলদিয়া বন্দরের ‘নেপাল কার্গো’ পরিবহণে। হলদিয়ার মাধ্যমে ভোজ্যতেলের কাঁচামাল অশোধিত পামঅয়েল সহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করে নেপাল। বন্দর বাণিজ্যে এটি নেপাল কার্গো হিসেবে পরিচিত। অশান্তির জেরে মূলত প্রভাব পড়েছে ওই ক্রুড পামঅয়েল পরিবহণে। ট্যাঙ্কারে করে ওই ক্রুড পামঅয়েল হলদিয়া বন্দর থেকে নেপালের বিভিন্ন ভোজ্যতেল কারখানায় পাঠানো হয়। সেই ভোজ্যতেলের কাঁচামাল পরিবহণ থমকে গিয়েছে। বন্দর থেকে লোডিংয়ের পর মাঝপথে প্রায় ৩০হাজার টন তেল পরিবহণ থমকে গিয়েছে। ক্রুড পামঅয়েল বোঝাই প্রায় এক হাজারটি ট্রাক ভারত-নেপাল সীমান্তে পাঁচদিন ধরে আটকে রয়েছে। হলদিয়া বন্দরেও ট্যাঙ্কারে ক্রুড পামঅয়েল লোডিং বন্ধ। ফলে চিন্তায় পড়েছেন হলদিয়া সহ রাজ্যের ট্রাক ও ট্যাঙ্কার পরিবহণ ব্যবসায়ীরা। নেপালের পট পরিবর্তন ও অশান্তি কবে মিটবে, সেদিকেই তাঁরা তাকিয়ে রয়েছেন। শুধু ট্রাক ও ট্যাঙ্কার ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য নয়, এক্সপোর্টার, ইমপোর্টার এবং হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষও এনিয়ে উদ্বেগে রয়েছে। তবে বিষয়টি আন্তর্জাতিক কুটনৈতিক সম্পর্কজনীত হওয়ার কারণে বন্দর কর্তৃপক্ষ মুখ খুলতে চায়নি। পট পরিবর্তনের ফলে নেপাল সরকার ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্কে কী ধরনের মনোভাব গ্রহণ করে, সেদিকেই সবাই তাকিয়ে রয়েছেন। কারণ নেপাল পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য ভারতের বন্দরগুলি ব্যবহার করে। এরা বরাবরই হলদিয়া বন্দরকে বাড়তি গুরুত্ব দেয়। হলদিয়া বন্দরের মাধ্যমে নেপাল বছরে ১২লক্ষ টনের উপর ক্রুড পামঅয়েল আমদানি করে।

    হলদিয়া বন্দর ও নেপালের মধ্যে ক্রুড পামঅয়েল পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ব্যবসায়ী শেখ আমির আলি। তিনি বলেন, নেপালে অশান্তির জন্য গত পাঁচদিনে তেল পরিবহণের উপর প্রভাব পড়েছে। শয়ে শয়ে ট্রাক ও ট্যাঙ্কার হলদিয়া থেকে মাল বোঝাই করে বেরিয়ে মাঝপথে থমকে রয়েছে। কবে জট খুলবে, বুঝতে পারছি না। নেপালের ব্যবসায়ীদের সূত্রে খবর পেয়েছি, আগামী মঙ্গল বা বুধবার নাগাদ পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক হতে পারে। 

    জানা গিয়েছে, নেপালে ক্রুড পামঅয়েল পরিবহণের কাজে রাজ্যের দেড় হাজারের বেশি ট্যাঙ্কার যুক্ত। শুধু হলদিয়ার দেড় শতাধিক ট্যাঙ্কার নেপালে ক্রুড অয়েল নিয়ে যায়। হলদিয়া বন্দরে গত দু’দিন ধরে নেপালের জন্য ট্যাঙ্কার লোডিং বন্ধ রয়েছে। হলদিয়া থেকে পণ্য নিয়ে নেপালে পৌঁছতে চারদিন সময় লাগে। বর্তমানে এরাজ্যের ২২০টি পণ্যবোঝাই ট্রাক নেপালে আটকে রয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের মধ্যে রক্সৌল সহ সীমান্ত এলাকায় ৭০০-র বেশি ট্রাক নেপাল কার্গো নিয়ে দাঁড়িয়ে। তবে হলদিয়া বন্দরের আধিকারিকরা আন্তর্জাতিক কুটনীতির কারণে বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার(প্রশাসন) প্রবীণকুমার দাস বলেন, নেপালের ঘটনায় বন্দরে তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি।

    বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন ধরনের পণ্য চলাচল বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনার জন্য গত ৭ মার্চ নেপালের বাণিজ্য মন্ত্রকের সচিব গোবিন্দ বাহাদুর কার্কে হলদিয়ায় এসেছিলেন। ওইদিন ১০ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল হলদিয়া ঘুরে দেখে। ২০২৪সালের ৯ আগস্ট নেপালের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী দামোদর ভাণ্ডারির নেতৃত্বে ১৪জনের এক প্রতিনিধি দল হলদিয়ায় আসে। বন্দর কর্তারা বলেন, হলদিয়া বন্দরের উপর নেপালের নতুন করে বাণিজ্যিক আস্থা বাড়ছে। হলদিয়া বন্দরের মাধ্যমে নেপাল কন্টেনার কার্গো, ভোজ্য তেল এবং কয়লার মতো ড্রাই বাল্ক কার্গো আমদানি করে। নেপালের সিমেন্ট প্ল্যান্টের জন্য ওরা কয়লা নিয়ে যায়। ভোজ্যতেল আমদানি ৬০ শতাংশ বেড়েছে। মাস ছ’য়েক আগে নেপালের বাণিজ্য মন্ত্রক হলদিয়া বন্দরের পণ্য রাখার জন্য রেলপথ লাগোয়া আরও জমি চেয়েছিল।
  • Link to this news (বর্তমান)