নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: দু’সপ্তাহ ধরে হন্যে হয়ে খোঁজার পর অবশেষে শার্প শ্যুটার গ্যাংয়ের মাথা চাঁদের নাগাল পেল পুলিশ। আসানসোল পুরসভার অস্থায়ী কর্মী জাভেদ বারিককে গুলি করে খুনের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার সুপারি নিয়েছিল। তার টিমই নিয়ামতপুরে নির্মমভাবে জাভেদের মাথায় গুলি করে খুন করে। আসানসোলে বসে খুনের সুপারি নেওয়া ও শার্প শ্যুটারদের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে ঘুম উবেছিল পুলিশের। প্রথমে শার্প শ্যুটারদের গ্রেপ্তার করে পরে তাদের টিমের মাথাকে জালে তুলে স্বস্তি ফিরেছে পুলিশ মহলে। শুক্রবার আসানসোলের বস্তিন বাজারে নিজের ডেরায় ফিরতেই সইদ আলি কুরেশি ওরফে চাঁদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে পুলিশ বিষয়টি প্রকাশ্যে আনে। পুলিশ তার স্কুটির ডিকি থেকে খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধার করেছে। নিজের ডেরায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ফিরে ফের কী শ্যুটআউটের ছক কষছিল চাঁদ? উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
২৯আগস্ট কুলটি থানার নিয়ামতপুরে খুন হন জাভেদ বারিক। রাতে বাজার থেকে পান খেয়ে বাড়ি ফেরার সময় খুব কাছ থেকে দুষ্কৃতীরা তাঁকে গুলি করে চম্পট দেয়। পুরো হত্যাকাণ্ড সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। দেখেই বোঝা গিয়েছিল, শার্প শ্যুটারদের কাণ্ড। গুলি করার সময়ে বিন্দুমাত্র হাত কাঁপেনি দুষ্কৃতীদের। এরপরই বিহার ও ঝাড়খণ্ডের শার্প শ্যুটারদের সঙ্গে এর যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করে পুলিস। তদন্ত যত এগিয়েছে, পুলিসের কাছে স্পষ্ট হয়েছে ভিনরাজ্যের দুষ্কৃতী নয়, এই টিম খোদ খনি শহর আসানসোলের। তখনই পুলিশ জানতে পারে, ভিনরাজ্যের গ্যাংস্টারদের মতো আসানসোলে বসে খুনের বরাত নিয়েছিল চাঁদ। যার সঙ্গে অনেক প্রভাবশালীর যোগ পাওয়া যায়। সে-ই পাঁচ লক্ষ টাকার সুপারি নিয়ে জাভেদকে নিকেশ করতে শার্প শ্যুটার বছর ২০-র আদিল আলম সহ চারজনকে পাঠিয়েছিল। পেশাদার খুনিদের মতোই দু’টি টিমে ভাগ হয়েছিল চারজন। দু’জনের অ্যাকশন স্কোয়াডের নেতৃত্ব দিচ্ছিল আদিল। তারা বিফল হলে বিকল্প দু’জনের টিমও রেডি ছিল। পুলিশ সেই চারজনকে আসানসোল থেকেই গ্রেপ্তার করে। যদিও অল্পের জন্য সেবার হাতছাড়া হয়ে যায় গ্যাংয়ের মাস্টারমাইন্ড চাঁদ।
আসানসোল শিল্পাঞ্চল বহু শ্যুটআউটের সাক্ষী। চিনাকুড়িতে ধারাবাহিক শ্যুটআউটে খুনের ঘটনা ঘটে। আসানসোলে হোটেল ব্যবসায়ীকে নিজের হোটেলে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। রানিগঞ্জে পুলিশ ও ডাকাতদের গুলিযুদ্ধ হয়েছে। হোটেল ব্যবসায়ী খুনের কিনারা হয়নি। বাকি সব ক্ষেত্রেই খুনিরা ছিল ঝাড়খণ্ড বা বিহারের। এবারই প্রথম পুলিশ জানতে পেরেছিল, আসানসোলে বসেই খুনের বরাত নেওয়া হয়েছে। তাই এই গ্যাংকে অঙ্কুরে বিনাশ করতেই নির্দেশ আসে পুলিশের শীর্ষ মহল থেকে। তারপরই এল সাফল্য।
পুজোর আগে পুরো শ্যুটার গ্যাংই পুলিস বা জেল হেফাজতে চলে যাওয়ায় স্বস্তি পেয়েছে সাধারণ মানুষও। তবে এই গ্যাংয়ের সঙ্গেও যোগসূত্র মিলেছে বিহারের। বিহার থেকেই চাঁদ আগ্নেয়াস্ত্রটি আনিয়েছিল। এমনকী অপারেশন করার পর বিহারেই পুরো টিমটি আত্মগোপন করেছিল। এই গ্যাংয়ের সঙ্গে বিহারের কোনও গ্যাংয়ের যোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ডিসি সন্দীপ কাররা বলেন, খুনের ঘটনায় মোট ১০জনের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তার মধ্যে আমরা আটজন গ্রেপ্তার হয়েছে। তদন্ত চলছে।