• চকদিঘি জমিদার বাড়িতে মহিলারা পর্দার আড়াল থেকে পুজো দেখেন
    বর্তমান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: সত্যজিৎ রায়ের ‘ঘরে বাইরে’র জামালপুরের চকদিঘির সেই জমিদার বাড়িতে অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে। সেই হাতিশাল বা ঘোড়াশাল এখন আর নেই।  ‘হাওয়া মহল’ও বিলুপ্তির পথে। বাগানবাড়ির সৌন্দর্যও হারিয়েছে। এতকিছুর পরিবর্তন হলেও এখানকার পুজোর রেওয়াজ বদলায়নি। এখনও পুরনো প্রথা মেনে দুর্গাপুজোর সময় বাড়ির মহিলারা পর্দার আড়ালেই থাকেন। তাঁদের পুজো দেখার জন্য জমিদার বাড়িতে আলাদা বন্দোবস্ত রয়েছে। ঠিক যেমন জমিদারি আমলে ছিল। জমিদারি ব্যবস্থা পতন আগেই হয়েছে। কিন্তু, এই বাড়ির আভিজাত্য রয়ে গিয়েছে। বছরের অন্যান্য সময় এই জমিদার বাড়ি ফাঁকা পড়ে থাকলেও পুজোর চারদিন জমজমাট হয়ে ওঠে। ঝাড়বাতির আলোয় ঝলমলিয়ে ওঠে চারদিক। পরিবারের সদস্যরা এখানে এসে উপস্থিত হন। তাঁরা বাইরে থাকেন। পুজোর দিনগুলিতে নিজের মতো করে তাঁরা সময় কাটান। পুজো আসতে হাতে আর কয়েকটা দিন বাকি রয়েছে। সেইমতো জোরকদমে প্রস্তুতি চলছে। চারদিকে গজিয়ে ওঠা ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার করা হচ্ছে। মূর্তি গড়ার কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে।

    স্থানীয়রা বলেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এখানকার জমিদারবাড়ির পুজো দেখতে আসতেন। তিনি বাগানবাড়ির ‘হাওয়া মহল’ ঘরে থাকতেন। এই ঘর তাঁর প্রিয় ছিল। সেখানে বসে লেখালিখি করেছেন। সেই ঘর এখন গরিমা হারিয়েছে। তবে, বিদ্যাসাগর যে চেয়ারে বসতেন, সেটা এখনও রয়ে গিয়েছে। এছাড়া, আরও অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি পুজোর দিনগুলিতে এখানে হাজির হতেন। এখন সেই জাঁকজমক না থাকলেও পুজোর রীতি অটুট রয়েছে। নৈবেদ্যতে অন্য যে ফলই থাকুক না কেন, আখরোট, কাজু, কিশমিশ থাকবেই। আগেও এসব দিয়েই নৈবেদ্য সাজান হতো। এছাড়া মাখাসন্দেশ সহ বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি থাকে। এলাকার বাসিন্দাদের কাছে এই বাড়ির গুরুত্ব অন্যরকম। পুজোর দিনগুলিতে কোনও না কোনওসময় সেখানে তাঁরা ঢুঁ মারেন। জমিদারবাড়ির দেখভালকারী এক কর্মী বলেন, ‘বাবু’রা পুজোর সময় প্রতিবছরই আসেন। তখন এই জমিদার বাড়ির ছবি বদলে যায়। এলাকার লোকজনরাও ভিড় করেন। এই জমিদার বাড়িতে সত্যজিৎ রায়ের ‘ঘরে বাইরে’ সহ হালফিলের বিভিন্ন সিনেমার শ্যুটিং হয়েছে। রুপোলি পর্দার দৌলতে এই জমিদার বাড়ি এখন রাজ্যের বাসিন্দাদের কাছে অতিপরিচিত।

    চকদিঘির জমিদার বাড়ি দেখতে অনেকেই ভিড় করেন। কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করার অধিকার থাকে না। জমিদার বাড়ির সামনেই রয়েছে বাগানবাড়ি। আমগাছের ছায়ায় বসে অনেকেই জমিদার বাড়ির পুজোর আনন্দ অনুভব করেন। এলাকায় এখন পুজোর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। আশপাশের গ্রামে সর্বজনীন পুজো হয়। কিন্তু জমিদার বাড়ির পুজো এখনও নিজের গরিমায় উজ্জ্বল রয়েছে। পুজোর প্রতিটি রীতি এখানে মেনে চলা হয়। শুদ্ধ মন্ত্রোচ্চারণ, ঢাকের আওয়াজে প্রতিপদ থেকেই চকদিঘিতে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে।
  • Link to this news (বর্তমান)