• দেড়শো বছর ধরেই ‘অভিশপ্ত’ জমির আয় থেকে পুজো হয় মণ্ডল পরিবারে
    বর্তমান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, বহরমপুর: এক ব্রাহ্মণের ঘরের বিধবার জমি নিলামে কিনে অভিশাপ জুটেছিল অটল মণ্ডলের কপালে। বিধবার অভিশাপে টলে গিয়েছিলেন অটল। ঠিক করেন, এই জমির ফসল বিক্রির টাকায় মা দুর্গার আরাধনা করবেন। এ ঘটনা দেড়শো বছর আগের। আজও সেই পুজো হয়ে আসছে নওদা ব্লকের আলমপুরে (পুরাতন)। 

    অটল মণ্ডলের পরিবার আজ ভেঙে প্রায় একশো টুকরো, কিন্তু তা হলেও পুজোর চারদিন পরিবারের সমস্ত শরিক এক হেঁশেলে খান। সন্ধিপুজোর পর তিনটি গ্রামের পাঁচশো পরিবারে মায়ের প্রসাদ লুচি-মন্ডা পৌঁছে দেওয়া হয়। দশমীতে বিসর্জনের পর গ্রামবাসীদের পাত পেড়ে লুচি, তরকারি, বোঁদে খাওয়ানো হয়। বিসর্জনের পর মায়ের প্রতিমার কাঠামো তুলে আনা হয় না। প্রতিবছর রথের দিন নতুন কাঠামো তৈরি করে মাটি দেওয়া হয়। বংশানুক্রমে বৈষ্ণব মতে মণ্ডলবাড়ির পুজো করে আসছেন বহরমপুরের এক ব্রাহ্মণ পরিবার। অটল মণ্ডলের চালু করা কোনও নিয়মের আজও হেরফের হতে দেয় না পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম।

    ১৫০ বছর আগে আলমপুরের এক ব্রাহ্মণ বিধবার ৮০ বিঘা কৃষিজমি নিলামে উঠেছিল। নিলামে ৮০ বিঘা জমি কিনে নেন অটল মণ্ডল। বিধবা ব্রাহ্মণ রুষ্ট হয়ে অভিশাপ দেন— এই জমির ফসল যে ভোগ করবে তাঁরই অকাল মৃত্যু হবে। ব্রাহ্মণ বিধাবার চোখের জল উপেক্ষা করতে পারেননি অটলবাবু। তিনি ঠিক করেন, এই জমির ফসল দেবী পুজোয় খরচ করবেন। সেই বছরই বাড়িতে দুর্গাপুজো করেন অটল মণ্ডল। পরে ফসল বিক্রির টাকায় দ্বিতল দুর্গাদালান তৈরি করেন। সংস্কারের অভাবে একশো বছর আগে সেই মন্দির ধংসস্তূপে পরিণত হয়। পরবর্তী প্রজন্ম জমির আয়ের টাকায় সেখানেই গথিক স্থাপত্যে একতলা দালান নির্মাণ করেন। দুর্গাঘর, ভোগঘর, রান্নাঘর সহ পুরোহিত, ঢাকিদের থাকার জন্যও ঘর তৈরি করা হয়। গত ৫০ বছর ধরে নতুন দালানেই পুজো হয়ে আসছে। 

    ষষ্ঠীতে মঙ্গলঘট ভরার মধ্যে দিয়ে হয় পুজোর সূচনা। পালকিতে চাপিয়ে নবপত্রিকা এনে স্থাপন করা হয়। মণ্ডল পরিবার শরিকরা রাজ্য এবং রাজ্যের বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। তবে পুজোয় সবাই অংশ নেন। আর এই চারদিন পরিবারের সকলের এক হেঁশেলে রান্না হয়। নতুন পুরাতন দুই আলমপুর সহ রামনগর গ্রামের ৫০০টি পরিবারে সন্ধিপুজোর লুচি-মন্ডার প্রসাদ পৌঁছে দেওয়ার প্রথা আজও বদলায়নি। বছর কুড়ি আগেও কাঁধে চাপিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হতো। এখন অবশ্য সেই প্রথার বদল হয়েছে। তবে প্রতিমার কাঠামো ও আদলের কোনও পরিবর্তন হয়নি। পরিবারের সদস্য যাদব মণ্ডল বলেন, অটল মণ্ডলের সিদ্ধান্তের আজও কোন রদবদল হয়নি। সেই ঐতিহ্য মেনেই দুর্গাপুজো হয়ে আসছে।
  • Link to this news (বর্তমান)