জোর করে গর্ভপাত, রেজিস্ট্রিতে অনীহা প্রেমিকের, আর জি করের পড়ুয়ার মৃত্যু
বর্তমান | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, মালদহ ও বালুরঘাট: মন্দিরে সিঁদুর পরিয়ে বিয়ে, কিন্তু রেজিস্ট্রি করতে বারংবার অস্বীকার করা। এরপর জোর করে গর্ভপাত। ফের বিয়ের জন্য চাপ দিলে হোটেলে ডেকে পাঠানো। তারপর আর জি কর মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ফাইনাল ইয়ারের এক ছাত্রীর মৃত্যু। গোটা ঘটনা ঘিরে তুমুল রহস্য তৈরি হয়েছে মালদহে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ছাত্রীর নাম অনিন্দিতা সোরেন (২৫)। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটের বাসিন্দা। তিনি মালদহ মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শুক্রবার সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতায় রেফার করা হয়। যাওয়ার পথে সুজাপুরে অ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন তিনি। ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমেছে ইংলিশবাজার থানার পুলিশ।
মেয়ের মৃত্যুর জন্য প্রেমিক উজ্জ্বল সোরেনকে কাঠগড়ায় তুলেছেন অনিন্দিতার মা আলপনা টুডু (সোরেন)। উজ্জ্বলের বাড়ি পুরুলিয়ায়। তিনি মালদহ মেডিকেল কলেজের ডাক্তারি ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। সূত্রের খবর, বছর খানেক আগে সমাজমাধ্যমে আলাপ হয় দুই ডাক্তারি পড়ুয়ার। এরপর মেডিকেল পড়ুয়াদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দু’জনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। আলপনাদেবীর অভিযোগ, মাস চারেক আগে পুরীর সাক্ষীগোপাল মন্দিরে মেয়েকে সিঁদুর পরিয়ে বিয়ে করেছিল উজ্জ্বল। কিছুদিন পর মেয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। তারপর থেকে বারবার রেজিস্ট্রি বিয়ের কথা বললেও, অনীহা দেখাচ্ছিল উজ্জ্বল। এমনকী জোর করে মেয়ের গর্ভপাতও করানো হয়। ঘটনার পর পালিয়েছিলেন উজ্জ্বল। রাতে মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব জানান, অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
মৃতার মা আলপনা টুডু বলেন, ‘উজ্জ্বল যখন তখন কলকাতা থেকে মেয়েকে ডেকে পাঠাত। গত সোমবারও মেয়েকে মালদহে ডেকে পাঠায়। ওরা দু’জন মালদহের একটি হোটেলে ছিল। আমি উজ্জ্বলের কাছে জানতে চাই, কবে সে আমার মেয়েকে বাড়িতে পাঠাবে? কিন্তু ও বলে, আমাদের একটা জরুরি কাজ আছে। মেয়েকেও পাঠায়নি। শুক্রবার সে হঠাৎ ফোন করে বলে, মেয়ে খুব অসুস্থ। তখনই আমরা চলে আসি। মেয়ে কোনও ওষুধ খেয়েছিল নাকি তাঁকে ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল, তা জানি না। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক। আমি উজ্জ্বলের শাস্তি চাই।’ বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার মালদহের হোটেলে রেজিস্ট্রি বিয়ে করার বিষয়ে অনিন্দিতার সঙ্গে উজ্জ্বলের বচসা হয়। সেই সময় একগুচ্ছ পেইনকিলার ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন অনিন্দিতা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বৃহস্পতিবারই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার অবস্থার অবনতি হওয়ায় কলকাতায় রেফার করা হয়। রাস্তাতেই মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশ জানিয়েছে, ঠিক কী কারণে মৃত্যু, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে তা পরিষ্কার হবে।
মৃতার বাবা যোশেফ সোরেন একটি গ্রামীণ ব্যাংকের ম্যানেজার। মৃতার ভাই অনুপম সোরেন কৃষি বিজ্ঞানে স্নাতক হয়ে চাকরির খোঁজ করছেন। কলকাতার পথে সুজাপুরে যখন মৃত্যু হয় অনিন্দিতার, তখন সঙ্গে ছিলেন ভাই অনুপম। ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন অনিন্দিতার গোটা পরিবার। তাঁদের দাবি, যথাযথ তদন্ত করে মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করা হোক। দোষী যেন শাস্তি পায়।
অনিন্দিতার এহেন করুণ পরিণতিতে অভিযোগের আঙুল উঠেছে এক চিকিৎসক পড়ুয়ার দিকে। আম জনতার প্রশ্ন, তাই কি অভয়া পর্বের বিপ্লবীরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন?